প্রচণ্ড তাপে পুড়ছে তিন মহাদেশ
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রাও। তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কিছু অংশে। তীব্র গরমের সঙ্গে লড়াই করছে এসব অঞ্চলের এক কোটি মানুষ। রেকর্ড তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে দেওয়া হয়েছে পূর্ভাবাস। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই এমনটি হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিশ্বের জন্য কতটুকু হুমকি তা এই তাপপ্রবাহ জানান দিচ্ছে। আজ রোববার (১৬ জুলাই) সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন জানিয়েছে এসব তথ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিভাগের মতে, টেক্সাস থেকে ক্যালির্ফোনিয়া পর্যন্ত চলা দাবদাহে তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাবে। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে তাপমাত্রা বিপজ্জনক হারে বাড়বে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া দিনের তাপমাত্রা পশ্চিমের স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেশি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনার রাজধানী ফনিক্সে টানা ১৬ দিন ধরে তাপমাত্রা ১০৯ ফারেনহাইটৈর (৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর গতকাল শনিবার রাজধানীতে ১১১ ফারেনহাইট তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই শহরের তাপমাত্রা ১১৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম গরম এলাকা, ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালির তাপমাত্রা আজ আগের সব রেকর্ড ভাঙতে পারে। এই এলাকার তাপমাত্রা ১৩০ ফারেনহাইটে পৌঁছাতে পারে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি বাসিন্দাদের দিনের বেলায় বাড়ির বাইরে না যেতে পরামর্শ দিয়েছে। একইসঙ্গে ডিহাইড্রেশন থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে।
লাস ভেগাসের আবহাওয়া পরিষেবা দপ্তর উচ্চ তাপমাত্রা নিয়ে সতর্ক করেছে। তারা বলছে, উচ্চ তাপমাত্রা মরুভূমির জলবায়ুর সঙ্গে আসে বলে ধরে নেওয়া একটি বিপজ্জনক মানসিকতা! এই তাপপ্রবাহটি সাধারণ মরুভূমির তাপ নয়।’
ক্যালির্ফোনিয়ার উত্তরাঞ্চলে বেশ কয়েকটি দাবানল পরিলক্ষিত হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দাবানলের আগুন নেভাতে লড়াই করে যাচ্ছে। এর মধ্যে নদী তীরবর্তী একটি কাউন্টিতে সাত হাজার পাঁচশ একর (তিন হাজার একর) বনভূমি পুড়ে গেছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, কানাডায়ও দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। তাদের তথ্য মতে, চলতি বছরে দাবানলে এক কোটি হেক্টর বনভূমি পুড়ে গেছে। গ্রীষ্ম আসার সঙ্গে সঙ্গে দাবানল আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিবে বলে ধারণা করছে কানাডা সরকার।
ইউরোপের দেশ ইতালিতে রেকর্ড তাপমাত্রা পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দেশটির রাজধানী রোম, বোলোগান, ফ্লোরেন্সসহ ১৬ শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইতালির আবহাওয়াকেন্দ্র তীব্র দাকদাহের রেকর্ড ভাঙা নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলছেন। দাবদাহে আগামীকালের মধ্যে রোমের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। আর মঙ্গলবারের মধ্যে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই তাপমাত্রা ২০০৭ সালের রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে। ওই বছরের আগস্টে রোমের তাপমাত্রা ৪০ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, সিকিলি ওসারদিনিয়া দ্বীপের তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাবে। যদি এমনটা হয়, তাহলে ইউরোপের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হবে এটি।
গ্রিসের অন্যতম পযয়টক আকর্ষণ অ্যাথেন্সের অ্যাক্রোপলিস বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ সহ টানা তিনদিন দিনের একটি সময়ে এই পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে, ফ্রান্সে উচ্চ তাপমাত্রায় খরার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে রয়েছে দেশটির কৃষিজাত শিল্প। আবহাওয়াবিদদের সমালোচনা করেছেন দেশটির কৃষিমন্ত্রী মার্ক ফেসনিয়াও।
গত জুন ছিল ফ্রান্সের ইতিহাসের দ্বিতীয় উষ্ণতম মাস। এ ছাগা গত মঙ্গলবার থেকে দেশটির কয়েকটি এলাকায় তীব্র দাবদাহের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়।
স্পেনের আবহাওয়া অধিদপ্তরও দাবদাহের জন্য সতর্ক করেছে। তারা জানিয়েছে, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত দাবদাহ চলতে পারে। এ সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকবে।
এদিকে, আজ জাপানে মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে বন্যার দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া একটি গাড়ি থেকে এক পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে, গত এক সপ্তাহে একই ধরণের আবহাওয়ায় দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সাতজনের মৃত্যু হয়।
জাপানের এক অংশে বন্যা ও অতিবৃষ্টি হলেও দেশটির পশ্চিমাংশে দাবদাহ চলছে। আজ ও আগামীকাল এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকবে বলে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ।
দক্ষিণ কোরিয়ায় অতিবৃষ্টিতে বন্যার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। চার দিনের টানা বৃষ্টিতে দেশটিতে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও নিখোঁজ ১০ জন। বুধবার পর্যন্ত আরও বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
টানা বৃষ্টিপাত ও মৌসুমি বন্যায় ভারতের উত্তরাঞ্চলে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, এর আগে দাবদাহে পুড়েছে দেশটির অঞ্চলগুলো। বর্ষা মৌসুমে ভারতে বন্যা ও ভূমিধস স্বাভাবিক হলেও এবারের প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনের বিভিন্ন অংশে তাপমাত্রা অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে যেতে পারে পূর্ভাবাস দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে মরোক্কোতে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ইরাকে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এতে করে শুকিয়ে যাচ্ছে দেশটির নদীগুলো। মাঝ নদীতে বুকসমান পানি পরিলক্ষিত হচ্ছে।