ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দিলেন ট্রাম্প

ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে স্বীকৃত জাতীয় ভাষা পেল যুক্তরাষ্ট্র। এতে সেখানে ভিন্ন ভাষায় যারা কথা বলেন, তারা কোণঠাসা হয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় শনিবার (১ মার্চ) তার এই আদেশের কারণে সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো—যারা কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল পায়—ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় নথি সরবরাহ ও সেবা দেবে কিনা; সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। অর্থাৎ অন্য ভাষায় যদি তারা সেবা দিতে না চান, তাহলে আইনগতভাবে তাদের বাধ্য করা যাবে না।
২০০০ সালে অ-ইংরেজিভাষীদের ভাষাগত সহায়তা করতে সরকার কিংবা সংস্থাগুলোকে বাধ্য করে একটি ম্যান্ডেট জারি করেছিলেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। নতুন এই আদেশের মাধ্যমে সেটি বাতিল হয়ে গেছে। খবর এপি, ওয়াশিংটন পোস্ট ও বিবিসির।
ট্রাম্পের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইংরেজিকে সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে কেবল যোগাযোগকেই সহজ করা হয়নি, আমেরিকার জাতীয় মূল্যবোধকেও জোরদার করা হয়েছে। একটি সুসংগঠিত ও দক্ষ সমাজ গড়তে এটি সহায়ক হবে।
নির্বাহী আদেশে বলা হয়, এই নীতি আমাদের জাতীয় ভাষা শেখা ও আত্মস্থ করতে নতুন আমেরিকানদের উৎসাহিত করবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র একটি অভিন্ন বসতি হিসেবে গড়ে উঠবে; পাশাপাশি আমেরিকার স্বপ্নপূরণে নতুন নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করবে।
ওই আদেশে আরও বলা হয়, ইংরেজিতে কথা বলার মধ্য দিয়ে তাদের জন্য কেবল অর্থনৈতিক দরজাই খুলে যাবে না, নতুন আগন্তুকরা নিজেদের কমিউনিটির সঙ্গে আরও বেশি করে যুক্ত হতে ও জাতীয় ঐতিহ্যকে গ্রহণ করতে পারবেন। আমাদের সমাজকে তারা আরও বেশি কিছু দিতে পারবেন।
ইংরেজিকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দিতে প্রচার চালিয়ে আসছে ইউ. এস. ইংলিশ নামের একটি গোষ্ঠী। তারা বলেছে, ‘এরই মধ্যে ইংরেজিকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দিয়ে ৩০টিরও বেশি অঙ্গরাজ্যে আইন পাশ করা হয়েছে। আলাস্কা ও হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে একাধিক আদি আমেরিকান ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।’
গেল কয়েক দশক ধরেই ইংরেজিকে রাষ্ট্রভাষা করে আইন পাশের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন দেশটির রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা। কিন্তু তারা সফল হতে পারেননি। যারা তাদের বিরোধিতা করছেন, তাদের দাবি—‘বিপুলসংখ্যক মানুষ ইংরেজিতে কথা বলছেন। কাজেই এটিকে আলাদা করে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দরকার নেই।’
এছাড়া এতে অ-ইংরেজিভাষীদের ওপর বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়া হবে বলে মনে করেন তারা।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় যারা ইংরেজিভাষী না, তাদের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘খুবই উদ্ভট বিষয় হচ্ছে, তাদের ভাষা আছে, কিন্তু এ দেশের কেউ তা শোনেননি। এটি খুবই ভয়ংকর বিষয়।’
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটের স্পেনিশ ভাষার সংস্করণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ধরনের পরিবর্তনে স্প্যানিশরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
তখন হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ‘তারা ওয়েবসাইটের স্পেনিশ ভাষার সংস্করণ ফিরিয়ে আনবেন।’ যদিও এখন পর্যন্ত সেটা করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের কোনো সাড়া মেলেনি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদেও হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটের স্পেনিশ ভাষার সংস্করণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেটি পুনর্বহাল করা হয়েছিল।
মার্কিন সেন্সাস ব্যুরোর তথ্যানুসারে, দেশটির ৩৪ কোটি বাসিন্দার মধ্যে ছয় কোটি ৮০ লাখ ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলেন। ১৬০টির বেশি আদি আমেরিকান ভাষা আছে।
ইংরেজির পরেই স্পেনিশ, বিভিন্ন চীনা ভাষা ও আরবি ভাষীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের প্রায় ১৮০টি দেশের সরকারি ভাষা আছে। কোনো কোনো দেশে একাধিক ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে কোনো সরকারি ভাষা নেই।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টরাল অ্যাসিস্ট্যান্স জানিয়েছে, সরকারি দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় যে ভাষা ব্যবহার করা হয়, সেটিই সরকারি ভাষা। কোনো একটি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে নথিভুক্ত করার মধ্য দিয়ে একটি রাষ্ট্রের চরিত্র ও নাগরিকদের সাংস্কৃতিক পরিচয় নির্ধারিত হয়ে যায়।
এতে বিশেষ একটি গোষ্ঠী ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে যেতে পারে এবং যাদের ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয় না, তারা কোণঠাসা হয়ে যেতে পারেন বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।