জুলাই আন্দোলনে দমনপীড়নে অংশ না নিতে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিলাম : ফলকার টুর্ক

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশে জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিলাম যে, দমন–পীড়নে যোগ দিলে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের হার্ডটক অনুষ্ঠানে ফলকার টুর্ক এসব কথা বলেন। গত বুধবার (৫ মার্চ) সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং মানবিক সহায়তা নিয়ে অনুষ্ঠিত এ সাক্ষাৎকার প্রচার করে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস। এ সময় ফলকার টুর্কের সঙ্গে কথা বলেন বিবিসির উপস্থাপক স্টিফেন সাকার।
শুরুতে উপস্থাপক বিশ্বজুড়ে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। গাজা, সুদান, ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে স্টিফেন সাকার বলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও মূল্যবোধ মেনে এসব পরিস্থিতি সমাধানে জাতিসংঘকে ক্ষমতাহীন মনে হচ্ছে। এর জবাব দিতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন ফলকার টুর্ক।
ফলকার টুর্ক বলেন, ‘আমি আপনাকে উদাহরণ দিচ্ছি, যেখানে এটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছিল। আমি গত বছরের বাংলাদেশের উদাহরণ দিচ্ছি। আপনি জানেন জুলাই–আগস্টে সেখানে ছাত্রদের ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তাদের জন্য বড় আশার জায়গা ছিল আসলে আমরা কী বলি, আমরা কী করতে পারি এবং আমরা ওই পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করি।’
ছাত্রদের আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের দমন-পীড়ন বন্ধে জাতিসংঘের ভূমিকা তুলে ধরে ফলকার টুর্ক বলেন, ‘আমরা প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করি, যদি তারা এতে জড়িত হয়, তার অর্থ দাঁড়াবে তারা হয়ত আর শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশ হিসেবে থাকতে পারবে না। ফলশ্রুতিতে আমরা পরিবর্তন দেখলাম।’

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী ভূমিকার কথা তুলে ধরে ফলকার টুর্ক আরও বলেন, অধ্যাপক ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিলেন, তিনি আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে বললেন, আপনি কি একটি তথ্যানুসন্ধানী দল পাঠাতে পারেন, পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দিতে পারেন এবং সেখানে যা ঘটেছে, তা তদন্ত করতে বললেন। আমরা এগুলোই করেছিলাম এবং এটা কার্যত সাহায্য করেছিল। আমি গত বছর বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করায় ছাত্ররা আমাদের প্রতি খুব কৃতজ্ঞ ছিল।
গাজায় প্রাণহানির কথা স্বীকার করে ফলকার টুর্ক বলেন, হতাহতের সংখ্যা যতটা কমিয়ে আনা যায়, সেই চেষ্টা করে জাতিসংঘ।
সুদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে টুর্ক বলেন, সিরিয়ায় মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পাশের দেশগুলোতে থাকা সহিংসতার শিকার মানুষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। সিরিয়া ও লেবাননের ক্ষেত্রে এটা রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই যুদ্ধ বন্ধ করতে তারা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।