রাশিয়ার সামরিক মহড়ায় ভারত-ইরান-বাংলাদেশ, পর্যবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র

রাশিয়া নেতৃত্বাধীন “জাপাদ-২০২৫” সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে ভারত, ইরান, বাংলাদেশসহ ৭টি দেশের সেনারা। এই মহড়ায় রাশিয়া ও বেলারুশ যৌথভাবে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অনুশীলন করেছে। একই সঙ্গে প্রদর্শন করা হয়েছে ওরেশনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা ইউক্রেন যুদ্ধে গত বছর প্রথমবারের মতো নিক্ষেপ করা হয়েছিল। খবর আল জাজিরার।
রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা তাস মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছে, মহড়ায় ভারতের অংশগ্রহণ মস্কো-নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রতিফলন। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে ৬৫ জন সেনা এতে অংশ নিয়েছে।
২০২১ সালেও রাশিয়ার ভলগোগ্রাদ অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী ও প্রচলিত সামরিক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল ভারতীয় সেনারা। তবে এবারের মহড়া বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে, কারণ বর্তমানে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে এবং রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের জ্বালানি আমদানি নিয়েও ওয়াশিংটনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে।
রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে নীঝনি নোভগোরোদ অঞ্চলে গিয়ে মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি জানান, মহড়ায় অংশ নিয়েছে প্রায় এক লাখ সেনা। পুতিন বলেন, মহড়ার উদ্দেশ্য রাশিয়া ও বেলারুশের “ইউনিয়ন স্টেট” রক্ষা।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেছেন, ছোট অস্ত্র থেকে শুরু করে পারমাণবিক ওয়ারহেড পর্যন্ত অনুশীলন করা হয়েছে, তবে কারও প্রতি হুমকি দেওয়ার জন্য নয়।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারত ছাড়াও ইরান, বাংলাদেশ, বুরকিনা ফাসো, কঙ্গো এবং মালি থেকেও সেনারা এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রও নিশ্চিত করেছে যে তারা আমন্ত্রণ পেয়ে মহড়া পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিনিধি পাঠিয়েছে।
শীতল যুদ্ধের সময় ভারত নিরপেক্ষ নীতি নিলেও অস্ত্রের বড় অংশ এসেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে। বর্তমানেও ভারতের বেশিরভাগ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রাশিয়া থেকে আমদানি করা। তবে গত দুই দশকে নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশ থেকেও অস্ত্র কেনার দিকে ঝুঁকেছে।
ভারতের কুমায়ুন রেজিমেন্টের নেতৃত্বে এবারের অংশগ্রহণকে রাশিয়ার সঙ্গে আস্থা ও সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই বহুজাতিক মহড়া ইউরোপকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছে।

এবারের মহড়ায় ইরানও অংশ নিয়েছে বলে তাস জানিয়েছে। মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্র তেহরান ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে। সম্প্রতি দুই দেশ একটি “সমগ্র কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি” স্বাক্ষর করেছে।
একই সঙ্গে, ইসরায়েলের বোমা হামলার পর কাস্পিয়ান সাগরে রাশিয়া-ইরান যৌথ সামরিক মহড়াও শুরু হয়েছে। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ে ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর।