জনসনের ১০ বিলিয়ন ডলারের সমঝোতা প্রস্তাব খারিজ

জনসন অ্যান্ড জনসনের ১০ বিলিয়ন ডলারের সমঝোতা প্রস্তাব খারিজ করেছেন একটি মার্কিন দেউলিয়া আদালত। হাজার হাজার মামলার নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে এ প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই মামলাগুলোতে অভিযোগ আনা হয়েছিল, জনসনের বেবি পাউডার এবং অন্যান্য ট্যালকম পণ্যগুলো ডিম্বাশয়ে ক্যানসারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩১ মার্চ) দেউলিয়া আদালতটি এ প্রস্তাব খারিজ করে দেন। এটি ছিল কোম্পানির দেউলিয়া কৌশলের তৃতীয় ব্যর্থতা।
জনসন অ্যান্ড জনসন এর আগে দুটি দেউলিয়া আবেদন করেছিল, যা অন্য আদালত খারিজ করেছিল। এবারও কোম্পানিটি একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করছিল, তবে সেটিও আদালতে টেকেনি।
এ বিষয়ে বিচারক ক্রিস্টোফার লোপেজ বলেছেন, কোম্পানিটি দেউলিয়া হওয়ার যোগ্য নয়। লোপেজ লিখেছেন, ‘যদিও আদালতের সিদ্ধান্তটি সহজ নয়, তবে এটি সঠিক সিদ্ধান্ত’।
লোপেজ বলেছেন, জনসন অ্যান্ড জনসনের প্রস্তাবিত সমঝোতাটি পর্যাপ্ত সমর্থন পায়নি সেইসব নারীদের কাছ থেকে, যারা অভিযোগ করেছিলেন যে জনসনের পণ্য তাদের ক্যানসার সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া, কোম্পানির প্রস্তাবটি মাত্রাতিরিক্তভাবে আইনি দাবির নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করেছিল এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও, যারা নিজেরা দেউলিয়া হওয়ার আবেদন করেনি। এর মধ্যে রয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসনের পণ্য বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতারা এবং কেনভিউ, যা জনসন অ্যান্ড জনসন ২০২৩ সালে আলাদা করেছিল।
লোপেজ তার রায়ে উল্লেখ করেন, প্রস্তাবটিতে এত বেশি সমস্যা ছিল যে সেগুলো দেউলিয়া আদালতের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়।
জনসন অ্যান্ড জনসন এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা আপিল করবে না, এমনকি তারা মামলার সমঝোতা করার কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেনি এবং পরিবর্তে ‘টোর্ট সিস্টেমে ফিরে গিয়ে এই অযৌক্তিক দাবিগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করবে’।
মামলাকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী এন্ডি বার্চফিল্ড বলেছেন, জনসন অ্যান্ড জনসনের দেউলিয়া কৌশল ছিল ‘কেবল একটি খারাপ বিশ্বাসের কৌশল, যা পুরোপুরি দায় এড়ানোর জন্য ছিল।’
বার্চফিল্ড আরও বলেছেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে আমরা এখন আর কোনও বিলম্ব ছাড়াই ট্রায়ালের দিকে এগোচ্ছি, যেখানে আমাদের ক্লায়েন্টরা অবশেষে তাদের মামলাগুলি জুরি সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করতে পারবে এবং তারা যে ন্যায়সঙ্গত বিচার প্রাপ্য, তা পাবে’।
জনসন অ্যান্ড জনসন দাবি করেছে, তৃতীয় প্রস্তাবটি টেক্সাস দেউলিয়া আদালতে সফল হওয়া উচিত ছিল। কারণ এতে আরও বেশি টাকা ছিল এবং এটি ক্যানসার রোগীদের একটি বড় অংশ দ্বারা সমর্থিত ছিল।

‘অপ্রয়োজনীয় তাড়াহুড়া’
লোপেজ জনসন অ্যান্ড জনসনের ভোট সংগ্রহ পদ্ধতির সমালোচনা করে বলেছেন, এখানে যথেষ্ট গুরুতর ত্রুটি ছিল, বিশেষ করে তাদের পক্ষে এবং বিপক্ষে ভোট দেওয়া প্রক্রিয়াতে। জনসন অ্যান্ড জনসন ৯০ হাজার ভোট সংগ্রহ করেছিল, দাবি করেছিল যে ৮৩ শতাংশ মামলাকারী তাদের সমর্থন করেছে। তবে লোপেজ বলেছিলেন যে ‘অন্তত অর্ধেক ভোট গোনা উচিত হয় না।’ কারণ কিছু আইনজীবী তাদের ক্লায়েন্টদের অনুমতি ছাড়াই ভোট দিয়েছেন এবং কেউ কেউ অনুমতি নেওয়ার কথা বললেও তার প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
বিচারকের মতে, ভোটগুলো ‘অপ্রয়োজনীয়ভাবে তাড়াহুড়ো’ করে সংগৃহীত হয়েছে, যেখানে ক্ষতিগ্রস্তরা সরাসরি ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি।
প্রস্তাবটির বিরোধিতা করা ক্যানসার আক্রান্তদের আইনজীবীরা এবং সরকারি পর্যবেক্ষকরা বলেন, জনসন অ্যান্ড জনসনের দেউলিয়া আবেদন আগের দুটি প্রচেষ্টার মতোই খারিজ করা উচিত, কারণ কোম্পানিটি ‘আর্থিক সংকটে নেই’। তাদের মতে, ধনী কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনের উচিত নয় দেউলিয়া আইন ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ বন্ধ করা।
জনসন অ্যান্ড জনসন বর্তমানে ৬০ হাজারের বেশি অভিযোগের মুখোমুখি, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে কোম্পানির বেবি পাউডার এবং অন্যান্য ট্যালকম পণ্য অ্যাসবেস্টসযুক্ত ছিল এবং ডিম্বাশয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করেছে। জনসন অ্যান্ড জনসনের প্রস্তাবিত নিষ্পত্তি সফল হলে এসব মামলা বন্ধ হয়ে যেত এবং ভবিষ্যতেও নতুন মামলা দায়ের করা যেত না।
১৮৯৪ সালে জনসন'স বেবি পাউডার বিক্রি শুরু করে জনসন অ্যান্ড জনসন। কোম্পানি দাবি করেছে, তাদের পণ্য নিরাপদ, এতে অ্যাসবেস্টস নেই এবং এটি ক্যানসার সৃষ্টি করে না। তবে ২০২০ সালে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্যালকভিত্তিক বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধ করে এবং কর্নস্টার্চভিত্তিক পাউডারে পরিবর্তন আনে।
এর আগেও জনসন অ্যান্ড জনসন আলাদাভাবে কিছু মামলা নিষ্পত্তি করেছে, যেখানে বলা হয়েছিল, তাদের ট্যালকম পণ্য মেসোথেলিওমা নামে এক বিরল ধরনের ক্যানসার সৃষ্টি করেছে, যা অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শে আসার কারণে হয়।
জনসন অ্যান্ড জনসন দাবি করেছিল, তাদের নিষ্পত্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ডিম্বাশয়ে ক্যানসার আক্রান্তরা ৭৫ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারতেন, তবে প্রকৃত পরিমাণ নির্ভর করত রোগীর রোগের মাত্রা ও ভবিষ্যতে সম্ভাব্য মামলা সংখ্যার ওপর।