এবার পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করলো ভারত

পেহেলগামের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় এবং দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও এক কঠোর অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। প্রতিবেশী দেশটি থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তান থেকে আসা অথবা পাকিস্তান হয়ে ট্রানজিট করা সব পণ্যের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য হবে। খবর এনডিটিভির।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানে উৎপাদিত বা রপ্তানি করা যেকোনো পণ্য, তা সরাসরি অথবা অন্য কোনো দেশের মাধ্যমে (পরোক্ষভাবে) ভারতে আমদানি করা হোক না কেন—এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। জাতীয় নিরাপত্তা এবং জননীতির স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। এই নিষেধাজ্ঞার কোনো প্রকার ব্যতিক্রমের জন্য ভারত সরকারের পূর্বানুমোদন অত্যাবশ্যক।’
উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যের একমাত্র স্থলপথ ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত পহেলগাম হামলার পরই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এবার সামগ্রিকভাবে আমদানি বন্ধের এই পদক্ষেপ বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও শীতল করে তুলবে।
পাকিস্তান থেকে ভারতে মূলত ওষুধ সামগ্রী, বিভিন্ন প্রকার ফল ও তৈলবীজ আমদানি করা হতো। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর থেকেই এই আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের মোট আমদানির ০.০০০১ শতাংশেরও কম ছিল এই বাণিজ্য।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে এক নৃশংস সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিরীহ বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান। এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্র ক্রমশ স্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। এই পদক্ষেপের ফলে ভারত এখন সিন্ধু নদ প্রণালীর পানি পাকিস্তানে প্রবাহিত করা বন্ধ করে দিতে পারে, যা পাকিস্তানের প্রধান জল সরবরাহের উৎস বন্ধ করে দেবে এবং লাখ লাখ নাগরিকের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করবে।

শুধু তাই নয়, ভারত পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সমস্ত ভিসা বাতিল করেছে। ভারতে বসবাসকারী পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতীয় ভূখণ্ড ত্যাগ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় মেডিকেল ভিসাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ভারতের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে। যার মধ্যে ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তিও অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি, উভয় দেশ তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কও হ্রাস করেছে।
ভারত বারবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দেওয়ার এবং সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ ঘাঁটি তৈরির অভিযোগ করে আসছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত দিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কোনো প্রকার বাণিজ্য আলোচনায় বসবে না।