ভারতের পদক্ষেপে আঞ্চলিক শান্তি বিঘ্নিত, জাতিসংঘে পাকিস্তানের উদ্বেগ

পেহেলগাম হামলার ঘটনায় ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতেখার।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সময় সোমবার (৫ মে) পাকিস্তানের অনুরোধে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খবর জিও নিউজের।
রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতেখার বলেন, ‘কাশ্মীর বিরোধ পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে একটি মৌলিক ইস্যু এবং কাশ্মীরি জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এর সমাধান করা উচিত। কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান কাশ্মীরি জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। এই মূল সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।’
আইআইওজেকের (ভারতীয় অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর) মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসিম ইফতেখার বলেন, ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকরা অব্যাহতভাবে নিপীড়ন ও নৃশংসতার শিকার হচ্ছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি জোর দিয়ে বলেন, ইসলামাবাদ বরাবরের মতোই বলেছে, পেহেলগাম হামলার ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। পাকিস্তান একটি স্বাধীন, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।
রাষ্ট্রদূত ইফতেখার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে প্রথম সারির দেশ ছিল এবং ওই যুদ্ধে ৯০ হাজারের বেশি জীবন উৎসর্গ করেছে। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের দূত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ভারতের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন।
রাষ্ট্রদূত ইফতেখার বলেন, পাকিস্তান তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সকল সমস্যা সমাধানে সংলাপকে অগ্রাধিকার দেয়। কারণ সংলাপই শান্তির একমাত্র কার্যকর পথ। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে ধন্যবাদ জানান।
নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব খালেদ খেয়ারি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ব্রিফ করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূত ইফতেখার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।

১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন, কাশ্মীরে সাম্প্রতিক মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে তা একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গুতেরেস দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি ‘বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। তিনি গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করেন, যাতে অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও আরও অনেকে আহত হন।
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলো হলো- চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া পাকিস্তান, আলজেরিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, গায়ানা, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন, স্লোভেনিয়া ও সোমালিয়া অস্থায়ী সদস্য হিসেবে রয়েছে।