সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা ট্রাম্পের

সিরিয়ার ওপর আরোপিত সব মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি আরব সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার (১৩ মে) রিয়াদে এক উচ্চপর্যায়ের বিনিয়োগ সম্মেলনে তিনি এ ঘােষণা দেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর মতে, “এখন সময় এসেছে সিরিয়ার এগিয়ে যাওয়ার।” খবর বিবিসির।
সিরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ছিল প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে চাপ তৈরির উদ্দেশ্যে। ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর ডিসেম্বর মাসে আসাদ পদত্যাগ করেন এবং বর্তমানে দেশটিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ শাইবানী এ সিদ্ধান্তকে “পুনর্গঠনের নতুন সূচনা” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট ফোর্ড বলেন, “সিরিয়া আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত। পুনর্গঠনের জন্য বিদেশি পুঁজি দরকার। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে উপসাগরীয় দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছ থেকে অর্থ প্রবাহ সহজ হবে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এই সফরের প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের বিশাল অস্ত্রচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাশাপাশি, অন্যান্য বিনিয়োগ ও সহযোগিতার ঘোষণা এসেছে, যা সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন ভবিষ্যতে এক ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।

এর আগে মঙ্গলবার রিয়াদে পৌঁছালে ট্রাম্পকে ল্যাভেন্ডার রঙের কার্পেট পেতে রাজকীয়ভাবে স্বাগত জানানো হয়। সৌদি সরকার ২০২১ সালে ঐতিহ্যবাহী লাল কার্পেটের পরিবর্তে ল্যাভেন্ডার রঙ গ্রহণ করে, যা মরুভূমির বুনো ফুল ও উদারতার প্রতীক বলে ধরা হয়।

ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এই সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে আছেন একাধিক শীর্ষ মার্কিন ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে রয়েছেন- ইলন মাস্ক (স্পেসএক্স), স্যাম অল্টম্যান (ওপেন এআই সিইও), ল্যারি ফিঙ্ক (ব্ল্যাকরক সিইও), জেনসেন হুয়াং (এনভিডিয়া সিইও)।
এই প্রতিনিধিদল সৌদি আরবের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত।
এনভিডিয়া প্রধান জেনসেন হুয়াং ঘোষণা করেছেন, তারা সৌদি কোম্পানি ‘হিউম্যান’-কে ১৮ হাজারের বেশি উন্নত এআই চিপ সরবরাহ করবেন।
ট্রাম্প বলেন, তাঁর ‘স্বপ্ন’ হলো সৌদি আরবকে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যুক্ত করা—একটি ঐতিহাসিক চুক্তি, যা তাঁর আগের শাসনামলে ইসরায়েল ও কিছু উপসাগরীয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল।
তবে সৌদি যুবরাজ জানিয়ে দিয়েছেন, গাজা যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি এবং ফিলিস্তিনের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া তা সম্ভব নয়।
গাজা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “গাজার মানুষ ভালো ভবিষ্যৎ পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু হামাস তা ছিনিয়ে নিচ্ছে অপহরণ, নির্যাতন ও রাজনীতির নামে সহিংসতার মাধ্যমে।”
রিয়াদ সফরের পর ট্রাম্প যাবেন কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই), যেখানে আগেই ঘোষণা এসেছে—ইউএই আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
ট্রাম্প আজ বুধবার (১৪ মে) সৌদি আরবেই সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।