গাজায় ইসরায়েলি হামলায় শিশুসহ অন্তত ১০০ জন নিহত

উত্তর গাজায় ইসরায়েলের সমন্বিত স্থল, নৌ ও বিমান হামলায় শিশুসহ অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন। গাজার সিভিল ডিফেন্স ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে আজ শুক্রবার (১৬ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
শুক্রবার ভোরে শুরু হওয়া এই হামলায় অন্তত ৯টি বসতবাড়ি ও তাবু বোমায় ধ্বংস হয়েছে বলে জানায় সিভিল ডিফেন্স। তারা জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া বহু মানুষের কাছ থেকে সাহায্যের অনুরোধ পেয়েছেন তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া এলাকায় বোমা, ট্যাংক এবং তীব্র কামানের গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, তারা “সন্ত্রাসী অবকাঠামো চিহ্নিত ও ধ্বংসে” অভিযান চালাচ্ছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় “বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে হত্যা” করেছে।
মার্চ মাসে হামলা ফের শুরু করার পর থেকে এটি উত্তর গাজায় ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় স্থল অভিযান।
বেইত লাহিয়া থেকে পালিয়ে জাবালিয়ায় আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দা বাসির আল-গান্দুর বলেন, “রাতের গভীরে সবাই যখন ঘুমিয়ে, তখন হঠাৎ চারপাশ থেকে তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু হয়—আকাশ, সমুদ্র, সবদিক থেকে। আমার ভাইয়ের বাড়ি ধসে পড়ে। সেখানে ২৫ জন ছিলেন।”
তিনি জানান, ১১ জন আহত এবং ৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তার ৫ ও ১৮ বছর বয়সী দুই ভাগনি এবং ১৫ বছরের এক ভাগিনা ছিলেন। ভাইয়ের স্ত্রীর মৃতদেহ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়ে গেছে।
আরেক বাসিন্দা ইউসুফ সালেম জানান, তিনি ও তার তিন সন্তান “মাত্র মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন।” তিনি বলেন, প্রতিবেশীর বাড়িতে বিমান হামলা হয় এবং কেউই বেঁচে নেই। গোলাবর্ষণের মধ্যেই তারা ঘর ছাড়তে চেষ্টা করেন, কিন্তু একটি কোয়াডকপ্টার ড্রোন তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

ইসরায়েলি বাহিনী আল-সালাতিন এলাকায় অগ্রসর হওয়ার পাশাপাশি একটি স্কুল ঘিরে ফেলে যেখানে শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ভোরে উত্তর গাজার কিছু অংশে ইসরায়েলি বিমান থেকে লিফলেট ফেলা হয়, যেখানে এলাকাবাসীকে দ্রুত এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, কারণ বেশিরভাগ পরিবার ইতোমধ্যেই কয়েকবার স্থানান্তরিত হয়েছে এবং তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
গাজা সিটির বাসিন্দা সানা মারুফ বলেন, “আমরা জানি না কোথায় যাচ্ছি। আমাদের কাছে কোনো খাবার, পানি, কম্বল, কিছুই নেই। রাতে মানুষ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এটা ছিল এক ‘কালো রাত’। তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে বোমা ফেলছিল।”
এই হামলার আগের দিন বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও ১২০ জনের বেশি নিহত হন।
ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণ অংশেও হামাসের টানেল ও অবকাঠামো ধ্বংস করেছে এবং কয়েকজন হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে, যারা বিস্ফোরক বসানোর পরিকল্পনা করছিল।
যদিও এই হামলা গুরুতর ও বড় পরিসরের, কিন্তু এখনও পর্যন্ত এটি সেই “সম্পূর্ণ সামরিক অভিযান” নয়, যা ইসরায়েল আগে হুমকি দিয়েছিল।
ইসরায়েল হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি হামাস অস্ত্র না ফেলে ও জিম্মিদের ফেরত না দেয়, তবে তারা গাজা ফের স্থায়ীভাবে দখলে নেবে।

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি মার্চে ভেঙে যায় এবং ইসরায়েল ফের গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করে। একইসঙ্গে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য ও মানবিক সহায়তার ওপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেয়, যা জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব দেশগুলো কঠোরভাবে নিন্দা করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গত মাসে বলেছিলেন, এই অবরোধ “মূল চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার”, যাতে হামাসকে হারানো যায় ও সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
জাতিসংঘ সমর্থিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার প্রায় ২১ লাখ মানুষ চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, গাজায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।