শুল্ক নিয়ে ওয়ালমার্টকে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার (১৭ মে) ওয়ালমার্টকে কড়া ভাষায় সতর্ক করে বলেছেন, “শুল্কের দোহাই দেওয়া বন্ধ করুন।” চীনের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্কের কারণে ওয়ালমার্টের পণ্যের দাম বাড়বে বলে জানালে ট্রাম্প এমন প্রতিক্রিয়া দেন।
ওয়ালমার্টের সিইও ডগ ম্যাকমিলন গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) আয় বিবরণী প্রকাশের সময় বলেন, “শুল্কের পরিমাণ এতটাই বেশি যে, খুচরা ব্যবসার অল্প মুনাফার মধ্যে থেকে আমরা পুরো চাপ সামলাতে পারছি না।” খবর সিএনএনের।
শনিবার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্প লেখেন, “ওয়ালমার্ট আর চীন মিলে যেন ‘শুল্ক শেষ করে ফেলে’, আর গ্রাহকদের ওপর যেন কোন চাপ না পড়ে। আমি নজর রাখছি, আপনার গ্রাহকরাও রাখবে!”
ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, “ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলোই মূলত শুল্কের বোঝা বহন করে।” তবে সাবেক অর্থমন্ত্রী ল্যারি সামার্স এ ধরণের ভাবনাকে “নিরেট” বলে অভিহিত করেছেন।
ওয়ালমার্টের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জন ডেভিড রেইনি জানান, মে মাসের শেষ নাগাদ পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করবে, আর জুনে তা আরও বেশি বাড়বে।
ওয়ালমার্টের পণ্যের উৎস চীন, কানাডা, ভারত, মেক্সিকো ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ। এসব দেশের পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে, যেখানে স্টিল, গাড়ি ও পার্টসের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।
ম্যাকমিলন বলেন, “খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের বড় চিন্তার কারণ।” কলা, অ্যাভোকাডো, কফি—এসব পণ্য আসে কলম্বিয়া, কোস্টারিকা ও পেরু থেকে। আমদানি খরচ বাড়ায় দামও বাড়বে।
ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিকস জানায়, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে কলার দাম প্রতি পাউন্ডে ২ সেন্ট বেড়েছে।
স্কুল ব্যাগ, হ্যালোইন বা বড়দিনের সামগ্রীতে এখন থেকেই শুল্কের প্রভাবে পড়তে শুরু করেছে। ম্যাকমিলন বলেন, “আমদানি সময়েই শুল্ক পরিশোধ করতে হয়, ফলে পণ্য আসার সঙ্গে সঙ্গেই দাম বাড়ার চাপ তৈরি হচ্ছে।”
চীনে তৈরি খেলনার আধিক্য রয়েছে মার্কিন বাজারে—প্রায় ৮০ শতাংশ। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে বার্বি পুতুলের দাম ৪২.৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৪.৯৯ ডলার। নিনটেন্ডোর সুইচ ২ কনসোলের দাম ৪৫০ ডলার থেকে বেড়ে ৬০০ ডলার হতে পারে। অ্যাপল আইফোন ১৭-এর দাম ৭৯৯ ডলার থেকে বেড়ে এক হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় স্ট্রলার, জামাকাপড়, গাড়ির সিট, দুধের ফর্মুলার দামও বাড়বে। ৯০ শতাংশ শিশুপণ্য চীন থেকেই আসে এবং সেটি পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।
চীন থেকে আসা পণ্যের মধ্যে ৪ শতাংশ হলো আসবাবপত্র, বিছানার চাদর। তবে যেহেতু এগুলো অত্যাবশ্যকীয় নয়, দাম বাড়লে গ্রাহকরা তা কিনতে দেরি করবেন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক রায়ান মনার্ক বলেন, “ভোক্তারা উদ্বিগ্ন। তাই তারা টেকসই পণ্যের ক্রয় পিছিয়ে দিচ্ছেন—যেমন গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স বা আসবাব।”
ওয়ালমার্ট বলছে, “আমরা যতটা সম্ভব দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করব,” তবে সীমিত মুনাফার কারণে সব চাপ বহন সম্ভব নয় বলেও তারা জানিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি ও রিটেইল জায়ান্ট ওয়ালমার্টের মধ্যে টানাপড়েনের এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় চাপ পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর—যারা প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটাতে এসব দোকানের ওপর নির্ভরশীল।