ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল

ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল—এমন গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে সিএনএন।
তাদের মতে, এই হামলা হলে তা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক উদ্যোগের মুখে একটি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বড় ধরনের সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
তবে কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও মতপার্থক্য রয়েছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনায় ইসরায়েলের আস্থা কতটা, তা নির্ভর করবে ইসরায়েলের পদক্ষেপের ওপর।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, “গত কয়েক মাসে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।”
বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসন যদি ইরানের সঙ্গে এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছায়, যেখানে ইউরেনিয়াম মজুত রাখার সুযোগ ইরানকে দেওয়া হয়—তবে ইসরায়েল হামলার পথে এগোতে পারে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কিছু পদক্ষেপ—যেমন বোমা স্থানান্তর এবং বিশেষ বিমান মহড়া—এমন হামলার প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিতে পারে। তবে এসব পদক্ষেপ হয়তো ইরানকে বার্তা দেওয়ার কৌশলও হতে পারে, যেন তেহরান নিজেদের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করে।
ট্রাম্প প্রশাসন এখনও কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তবে মার্চে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির কাছে ট্রাম্প একটি চিঠি পাঠিয়ে ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন। সেই সময়সীমা ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।
একজন পশ্চিমা কূটনীতিকের বরাতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন—কূটনৈতিক উদ্যোগ ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে আপাতত হোয়াইট হাউজ কূটনৈতিক পথেই অটল রয়েছে।
ইসরায়েলের এক সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এমন একটি চুক্তি করে যা ইসরায়েল ‘অগ্রহণযোগ্য’ মনে করে, তবে তারা এককভাবে সামরিক হামলা চালাতে প্রস্তুত থাকবে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ফেব্রুয়ারি মাসের এক মূল্যায়নে বলা হয়, ইসরায়েল হয়তো ইরানের দুর্বল হয়ে পড়া বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান ব্যবহার করতে পারে।
তবে এমন হামলার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে খুব সামান্যই প্রভাব পড়বে বলে ওই মূল্যায়নে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ইরান বর্তমানে সামরিক দিক থেকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। গত অক্টোবরে ইসরায়েল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও ইরানের আঞ্চলিক মিত্রদের দমন ইসরায়েলের কাছে ইরানকে আরও দুর্বল করে ফেলেছে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল হামলা চালাতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামলায় জড়াবে না, যতক্ষণ না ইরান বড় ধরনের উস্কানি না দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনায় মূল বাধা হলো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ। ওয়াশিংটনের দাবি, ১ শতাংশও সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা রাখা যাবে না। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নতুন প্রস্তাব দিয়েছে, যেটি “ইরানকে অসম্মান না করেই” সমস্যার সমাধান করতে পারে বলে মনে করছে তারা।
তবে খামেনি মঙ্গলবার জানান, তিনি এই আলোচনায় ইতিবাচক ফল আশা করেন না। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দাবি—ইরান যেন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ না করে—তাকে “বড় ভুল” বলে মন্তব্য করেছেন।
ইরান জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির অধীনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার দাবি করে আসছে।