গাজায় অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৫, হামলায় নিহত ৬২

গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কমপক্ষে ৬২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯ জন খাদ্য সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টায় ছিলেন। একই দিনে আরও দু’জন অপুষ্টিতে মারা গেছেন। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে উপত্যকাটিতে অপুষ্টিতে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা এখন ১১৫-তে দাঁড়িয়েছে।
ইসরায়েল চলতি বছরের মার্চে গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে এবং মে মাসের শেষ থেকে খুব সামান্য পরিমাণে ত্রাণ ঢুকতে দেয়, যা এক ভয়াবহ মানবিক সংকট ও দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, “ক্ষুধার্ত পরিবারগুলো ভেঙে পড়ছে।” সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “অনেক বাবা-মা এতটাই দুর্বল যে তারা তাদের সন্তানদের যত্ন নিতে পারছেন না।”
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ওসিএএইচএ জানিয়েছে, ইসরায়েল ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে অপেক্ষমাণ সহায়তার সত্যতা যাচাইয়ে বাধা দিচ্ছে।
আল জাজিরার গাজা সিটি প্রতিনিধি হানি মাহমুদ বলেন, “জোরপূর্বক অনাহার, পানির অভাব ও ক্ষুধা গাজা উপত্যকাকে গ্রাস করে ফেলছে। মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ছে এবং তারা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারছে না।”
এই পরিস্থিতির মধ্যেই ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬০-এর বেশি সদস্য ইইউ পররাষ্ট্র নীতির প্রধান কাজজা ক্যালাসকে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আয়ারল্যান্ডের এমইপি লিন বয়লান বলেন, “ইইউ নেতাদের কাছে ফিলিস্তিনিদের জীবন ইউক্রেনীয়দের জীবনের সমতুল্য নয়। কেউ ইসরায়েলের সমালোচনা করলেই সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণের শিকার হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জার্মানি ও ফ্রান্সের নেতাদের সঙ্গে এক জরুরি ফোনালাপের ঘোষণা দেন, যেখানে হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও জরুরি খাদ্য সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়ে আলোচনা হবে।
একইদিনে গাজার শান্তি আলোচনাও ভেঙে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, তার দল কাতারে চলমান আলোচনা আগেভাগেই ত্যাগ করেছে। তিনি হামাসকে ‘যুদ্ধবিরতির আগ্রহ না দেখানো’র অভিযোগ করেন।
হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা শান্তিচুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত এবং আন্তরিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে চাই।”

এদিকে, বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দেন যে, তিনি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবেন।
তিনি বলেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফ্রান্সের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির অংশ।