মোদির বক্তব্যকে ‘বেপরোয়া উসকানি’ আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের নিন্দা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ‘বেপরোয়া উসকানি’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার (২৭ মে) পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে গুজরাটের একটি নির্বাচনি সমাবেশে মোদির দেওয়া ভাষণের কঠোর সমালোচনা করা হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআইয়ের শেয়ার করা একটি ভিডিওতে মোদিকে বলতে দেখা যায়— ‘পাকিস্তানের জনগণকে তাদের দেশকে সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শান্তিতে জীবনযাপন কর, তোমার রুটি খাও, নইলে আমার বুলেট বেছে নাও।’ এই মন্তব্যের পর জনতা তুমুল করতালিতে ফেটে পড়ে।
অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি ভয়াবহ হামলার বিষয়ে নয়াদিল্লি ইসলামাবাদকে দায়ী করার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্য এলো।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
মঙ্গলবার ভোরে পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান মোদির ‘গুজরাটে প্রচারণা সমাবেশের নাটকীয় পরিবেশে দেওয়া মন্তব্যের প্রতি মনোযোগ দিয়েছে, যা একটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রের নেতার কাছ থেকে প্রত্যাশিত সংযমের চেয়ে বেশি ছিল।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তার বক্তব্যে ঘৃণা-চালিত সহিংসতার আহ্বান গভীরভাবে বিরক্তিকর, কেবল এর বিষয়বস্তুর জন্যই নয় বরং অস্থিরতার ভারে ভারাক্রান্ত অঞ্চলে এটি যে বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে তার জন্যও।’ পাকিস্তান ‘ভারতীয় রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে পরিপক্কতা এবং ভদ্রতার অব্যাহত ক্ষয়ক্ষতির জন্য দুঃখিত’ বলেও জানায়।
পররাষ্ট্র দপ্তর উল্লেখ করেছে, এই ধরনের বিবৃতি জাতিসংঘ সনদের মৌলিক নীতিগুলোকে ‘স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন’ করে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে হুমকি বা বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করে।
পাকিস্তান এই মন্তব্যগুলোকে ‘একটি বেপরোয়া উসকানি’ হিসেবে দেখছে, যার উদ্দেশ্য ‘ভারতীয় অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর (আইআইওজেকে)-তে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং জনসংখ্যাগত প্রকৌশল থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নেতৃস্থানীয় অবদানকারী হিসেবে পাকিস্তানের রেকর্ড রয়েছে। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রচেষ্টায় তার ধারাবাহিক সহযোগিতা যেকোনো প্রতিকূল শব্দের চেয়েও বেশি স্পষ্ট।’
যদি চরমপন্থা সত্যিই ভারত সরকারের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়, তাহলে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং ক্রমবর্ধমান নৃশংস হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের অধীনে সংখ্যালঘুদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার উদ্বেগজনক উত্থানের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত’ বলে পাকিস্তান উল্লেখ করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে, পাকিস্তান পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সার্বভৌম সমতার ওপর ভিত্তি করে শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, ‘জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুসারে, তার নিরাপত্তা বা আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি যেকোনো হুমকির বিরুদ্ধে দৃঢ় এবং আনুপাতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৬ থেকে ৭ মে রাতে নয়াদিল্লি পাকিস্তানে একাধিক বিমান হামলা চালায়, যার ফলে বেশ কিছু বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়। এ সময় ইসলামাবাদ পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে। ভারত ড্রোন আটকানোর এবং উভয় পক্ষ একে অপরের বিমানঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালানোর পর ১০ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে উভয় পক্ষ অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়।