জাপানে শিশুদের নামকরণে নতুন নিয়ম চালু

জাপানে এখন আর শিশুদের ‘পিকাচু’, ‘নাইকি’ বা ‘পুডিং’-এর মতো অস্বাভাবিক ‘কিরাকিরা’ নাম রাখা যাবে না। গত সোমবার (২৬ মে) থেকে কার্যকর হওয়া নতুন সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, পিতা-মাতারা তাদের শিশুদের নাম অপ্রচলিত উপায়ে উচ্চারণ করা থেকে বিরত থাকবেন। এই কঠোর পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো— হাসপাতাল, স্কুল এবং কর্তৃপক্ষের জন্য সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করা, যারা এমন অস্বাভাবিক নাম উচ্চারণ করতে জানেন না।
যদিও এই ধরনের নাম জাপানে এখনও কম প্রচলিত। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ঐতিহ্যবাহী জাপানি নাম বাদ দিয়ে অভিভাবকরা ভিন্ন ধরনের নাম রাখার দিকে ঝুঁকছিলেন, যা ‘কিরাকিরা’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
এদিকে শিশুদের নামকরণ সরকারের পদক্ষেপ মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে। কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী যুক্তি দিয়েছেন, ‘কিরাকিরা’ নামগুলো ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের প্রকাশ এবং এগুলো ক্ষতিকারক নয়, তাই সরকারি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। একজন এক্স (সাবেক টুইটার) ব্যবহারকারী লিখেছেন, তারা জাতির সন্তান নয়, তাই না? তারা তাদের বাবা-মায়ের সন্তান।
তবে, অনেকেই এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, অস্বাভাবিক নামের শিশুরা হয়রানির সম্মুখীন হতে পারে, অথবা অন্তত প্রশাসনিক কাজে যেমন নিবন্ধন বা ব্যাংকিংয়ে জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে।
একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, কেন কিছু লোক তাদের বাচ্চাদের ‘কিরাকিরা’ নাম রাখে? এর ফলে সেই বাচ্চাদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
আরেকজন রসিকতা করেছেন— দয়া করে ‘কিরাকিরা’ নাম সীমাবদ্ধ করা বন্ধ করুন। একটি শিশুর নাম দেখলে তাদের বাবা-মায়ের বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ পায়।
জাপান তিনটি লেখার পদ্ধতি ব্যবহার করে– কাঞ্জি (চীনা অক্ষরের ওপর ভিত্তি করে) এবং দুটি ধ্বনিগত পদ্ধতি। নামগুলো সাধারণত কাঞ্জিতে লেখা হয় এবং এখানেই সমস্যা। প্রতিটি কাঞ্জি অক্ষর একাধিক উপায়ে উচ্চারণ করা যেতে পারে, কিছু ক্ষেত্রে দশ বা তার বেশি উপায়ে। প্রেক্ষাপট এবং বাক্যের অন্যান্য অক্ষরের ওপর ভিত্তি করে ‘সঠিক’ উচ্চারণটি বোঝা যায়।
১৯৮০-এর দশক থেকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘কিরাকিরা’ নামগুলো। বাবা-মা প্রায়শই ধ্বনির ওপর ভিত্তি করে একটি নাম বেছে নেন। সমস্যা হলো, একজন শিক্ষক বা নার্সের পক্ষে কেবল লিখিত কাঞ্জি ফর্ম দেখে শিশুর নাম সঠিকভাবে কীভাবে উচ্চারণ করা কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
জাপান সরকারের নতুন নিয়ম এই প্রবণতা সীমিত করার লক্ষ্যে। কেবল কাঞ্জি অক্ষরের ব্যাপকভাবে গৃহীত উচ্চারণগুলোকেই অনুমতি দেওয়া হবে। অভিভাবকদের তাদের শিশুর নামের ধ্বনিগত পাঠ রেজিস্ট্রিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যদি স্থানীয় কর্মকর্তারা দেখেন যে, কোনো নামের ধ্বনিগত শব্দ সাধারণত তার অক্ষরগুলোর সঙ্গে মেলে না, তাহলে তারা নামটি প্রত্যাখ্যান করতে পারেন অথবা অতিরিক্ত কাগজপত্রের জন্য অনুরোধ করতে পারেন।