ইরানে হামলার পর বিশ্ববাজারে বাড়ল তেলের দাম

ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) শেষ রাতে ইসরায়েলের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কায় বিশ্বজুড়ে তেলের দাম ১২ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। একইসঙ্গে, বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারেও বড় ধরনের পতন দেখা গেছে।
সপ্তাহের শুরুতে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে তেলের প্রধান চুক্তিগুলো ইতোমধ্যেই বৃদ্ধি পেয়েছিল। ইসরায়েলি হামলার পর পণ্য সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কার মধ্যে এই মূল্যবৃদ্ধি ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যা জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। যদিও ইরান জানিয়েছে তাদের মূল শোধনাগার ও জ্বালানি ডিপোগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, তবুও বিশ্ববাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে এশিয়া ও ইউরোপের ইক্যুইটি বাজারগুলো ধসে পড়েছে। অন্যদিকে, বন্ডের চাহিদা বেড়েছে এবং সোনার দাম প্রতি আউন্সে তিন হাজার ৪০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। মার্কিন ফিউচার বাজারও নিম্নমুখী।
এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিভেন ইনেস বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই পরিস্থিতি বিশ্ব বাজারের ঢাকনা উড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, ইক্যুইটি ফিউচারগুলো হ্রাস পাচ্ছে, বন্ডের ফলন ডুবে যাচ্ছে। সোনা ও তেলে দাম আকাশছোঁয়া।
ইনেস সতর্ক করে বলেন, ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের ভবিষ্যৎ দাম ৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছাচ্ছে। যদি হরমুজ প্রণালী যদি বিস্ফোরণের আওতায় পড়ে তাহলে তেলের দরে আরও ১৫ ডলার যোগ করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, যদি ইরান পিছু হটে, তাহলে আমরা স্বস্তির বাউন্স পাব। কিন্তু যদি তেল আবিবের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ শুরু হয় অথবা তেহরান প্রকৃত শক্তির সঙ্গে প্রতিশোধ নেয়, তাহলে আমরা এমন একটি পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছি যা ২০২৫ সালের বাকি সময়ের জন্য পুরো পরিস্থিতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।
ব্যাংকিং জায়ান্ট জেপি মরগান চেজ এই সপ্তাহেই সতর্ক করে দিয়েছিল যে, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হলে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১৩০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের ঘোষণার পর থেকেই বাজারের মনোভাব ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে আছে।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি হামলার খবর ও তেহরানের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা এসেছে, তাদের আঞ্চলিক শত্রু ‘তিক্ত ও বেদনাদায়ক’ পরিণতির মুখোমুখি হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এই অঞ্চলে ‘ব্যাপক সংঘাত’ সম্ভব।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই হুমকি দূর করতে যত দিন সময় লাগবে তত দিন এই অভিযান চলবে। আমরা ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির কেন্দ্রস্থলে আঘাত করেছি। আমরা নাতানজে ইরানের প্রধান সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা লক্ষ্য করেছি।’
নেতানিয়াহু দাবি করেন, ‘আমরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দুতেও আঘাত করেছি’ ও ‘ইরানি বোমা তৈরিতে কাজ করা’ পারমাণবিক বিজ্ঞানীরাও এই হামলায় আঘাত পেয়েছেন।
তেহরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলকে সতর্ক করে একটি বিবৃতি জারি করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, ‘এই অপরাধের মাধ্যমে ইহুদিবাদী সরকার একটি তিক্ত ও বেদনাদায়ক পরিণতির জন্য প্রস্তুত। এটি অবশ্যই তা পাবে।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এর আগে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, অবিলম্বে ইসরায়েল রাষ্ট্র ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা প্রত্যাশিত।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও আর্থিক বাজার
ট্রাম্প আগে বিশ্বাস করতেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর একটি বেশ ভালো চুক্তি ‘মোটামুটি কাছাকাছি’, তবে দেশটিতে ইসরায়েলি হামলা সেই চুক্তির সম্ভাবনা নষ্ট করতে পারে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এই অভিযানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

তবুও উদ্বেগ রয়েছে যে, যদি এই সপ্তাহে কোনো আঞ্চলিক সংঘাত শুরু হয়, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। ইরান এই অঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর হুমকি দেওয়ার পর থেকেই এই সংকট আরও গভীর হয়েছে।
তেহরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হামলার পরিণামের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দায়ী, ওয়াশিংটনের ‘সমন্বয় ও অনুমতি ছাড়া এগুলো করা সম্ভব ছিল না।