ইরানের হামলায় ইসরায়েলিদের চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্ক

ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলসহ বেশ কিছু অঞ্চলে ইরান থেকে ছোড়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় দেশটিতে ব্যাপক আতঙ্ক, বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসের সৃষ্টি হয়েছে। এসব হামলায় অন্তত দশজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। খবর টাইমস অব ইসরায়েল।
ইরান এই হামলা চালায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার প্রতিশোধ হিসেবে। এর আগে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক নেতৃত্বদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা সম্ভব হলেও কিছু মিসাইল তেল আবিব, রামাত গান ও রিশনের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সরাসরি আঘাত হানে। বাসা-বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়, বহু লোক রাতভর নিরাপদ আশ্রয়ে ছিলেন।
তেল আবিবের বাসিন্দা তালি হোরেশ বলেন, “আমরা সেফ রুমে ছিলাম, তখনই বিকট এক বিস্ফোরণে পুরো বিল্ডিং কেঁপে ওঠে। পরে বেরিয়ে দেখি ধোঁয়ায় ভরা বসার ঘর। নিচতলার অবস্থা ভয়াবহ, সবকিছু ছিন্নভিন্ন।”

রাতভর চলে উদ্ধারকাজ। ফায়ার সার্ভিস ক্যাপ্টেন ইদান চেন জানান, “একটি পরিবারের সবাই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছিলেন। তিন মাসের শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যদের হাতে তুলে দেই। এরপর একে একে অন্যদের বের করে আনি।”
রিশনের হামলায় নিহত হন ৭৩ বছর বয়সী ইসরায়েল আলোনি ও অপর একজন নারী। এ এলাকাতেও বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়ে। আহতদের মধ্যে অনেকেই বয়স্ক ও শিশু।

ইসরায়েলি হোম ফ্রন্ট কমান্ডের কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) মাইকেল ডেভিড বলেন, “এটা এমন এক ঘটনা, যা ইসরায়েলের ইতিহাসে নজিরবিহীন। উচ্চ ভবন, শত শত বাসিন্দা — একজনকেও ফেলে যাওয়া যাবে না, আমরা সেটি নিশ্চিত করছি।”
স্থানীয় বাসিন্দা আভি গাতেনিও বলেন, “আমার স্ত্রী বিদেশে, আমি আর বাচ্চারা ঘুমাচ্ছিলাম। সাইরেন বাজতেই আমরা নিচে নিরাপদ ঘরে নেমে যাই। কয়েক মিনিট পরেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। পরে বাইরে এসে দেখি আশেপাশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বিস্ফোরণের শব্দ, ধোঁয়া ও ধ্বংসস্তূপে রাত কেটেছে আতঙ্কে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশু ও বয়স্ক নাগরিক রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল গত সপ্তাহে ইরানের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কারখানায় হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন ইরানি সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। এরপরই ইরান এই পাল্টা হামলা চালায়। যদিও তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে, তবে ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমকে ইসরায়েল সামরিক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে।