ধ্বংসের মুখে গাজার সবচেয়ে বড় সক্রিয় হাসপাতাল, রোগী ভর্তি বন্ধ

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে ইসরায়েলি অভিযানের মধ্যেই গাজার সবচেয়ে বড় সক্রিয় হাসপাতাল নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স ধ্বংসের মুখে পড়েছে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা। জ্বালানি সংকট ও যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) থেকে হাসপাতালটি আর নতুন রোগী ভর্তি নিতে পারছে না। খবর বিবিসির।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সেনারা বৃহস্পতিবার হাসপাতালের মাত্র ২০০ মিটার দূরবর্তী একটি কবরস্থানে প্রবেশ করে আশেপাশের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর দিকে গুলি ও গোলাবর্ষণ শুরু করে। এরপর শুক্রবার তারা এলাকাটি থেকে সরে যায়। যাওয়ার আগে সেনারা মাটি খুঁড়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি চালায় বলে জানা যায়।
জীবন রক্ষাকারী সেবা চালু রাখতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও আইসিইউতে থাকা চিকিৎসক ও রোগীরা এখন তীব্র জ্বালানির অভাবে কাজ করছেন মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা স্থানীয় সাংবাদিকদের পাঠানো এক বার্তায় বলেন, “আমরা এখনো কাজ করছি, কিন্তু ট্যাংকগুলো মাত্র কয়েক মিটার দূরে। জীবন থেকে মৃত্যুই এখন বেশি কাছাকাছি।”
হাসপাতালের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু সাধারণ মানুষ ইসরায়েলি বাহিনীর ছোঁয়া গুলিতে আহত হন বলেও জানানো হয়েছে।
নাসের হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. সাবের আল-আসমার বলেন, ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতাল ঘিরে অভিযানের আগে কোনো ধরনের সতর্কবার্তা দেয়নি।
তিনি বলেন, "আমরা কোনো ধরনের নির্দেশ পাইনি। হঠাৎ চারপাশে গুলির শব্দ, গোলাবর্ষণ শুরু হলো। হাসপাতালের আঙিনায় পর্যন্ত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।"
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা খান ইউনিসে "সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো ধ্বংস" ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত রয়েছে। হাসপাতালের আশপাশের এলাকায় পূর্বে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ জারি করা হলেও সরাসরি অভিযানের আগে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি।
চিকিৎসা সংকট ও মানবিক বিপর্যয়
নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের জেনারেটরের জ্বালানি মাত্র একদিন চলবে, যা শুধু আইসিইউ ও নবজাতক ইউনিটে সীমিতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম। সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেলে, ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীরা তাৎক্ষণিক মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাজা প্রতিনিধি ড. রিক পেপারকর্ন সম্প্রতি হাসপাতালটি পরিদর্শন করে বলেন,
"এটি এখন এক বিশাল ট্রমা ওয়ার্ডে পরিণত হয়েছে। ৩৫০ শয্যার স্থানে ৭০০ রোগী ভর্তি, আর কর্মীরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন।"
তিনি বলেন, খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে বহু কিশোর-তরুণ গুরুতর আহত হচ্ছে, কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।
সাহায্যপ্রার্থীদের ওপর হামলা, রেড ক্রস কর্মী গুলিবিদ্ধ
শুক্রবার রাফাহতে ত্রাণ সংগ্রহের সময় ১০ জন বেসামরিক লোক নিহত হন। ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে তারা মারা গেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হলেও আইডিএফ এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) একজন কর্মী ও ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের এক স্বেচ্ছাসেবক বৃহস্পতিবার রাতে গুলিবিদ্ধ হন। তারা একজন আহত রেড ক্রস কর্মীকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন, যিনি এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন ছিলেন। অভিযানের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল এবং সব যানবাহন চিহ্নিত ও আলোকিত ছিল।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৭ হাজার ৭৬২ জন নিহত হয়েছেন।