বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতকে বাড়তি সুবিধা, কমতে পারে ট্রাম্পের শুল্ক

ভারতের সঙ্গে একটি সাময়িক বাণিজ্য চুক্তি করতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ভারতের পণ্যের ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক ২০ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে। যা এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতকে বাড়তি সুবিধা দেবে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০ শতাংশ শুল্ক পড়েছে মিয়ানমার ও লাওসের ওপর। বাংলাদেশকে ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের কথা জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ভারতের কাছে এই সপ্তাহে অন্যান্য অনেক দেশের মতো শুল্ক দাবি করে চিঠি পাঠানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং একটি বিবৃতির মাধ্যমে এই বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই চুক্তি ভারতকে ভবিষ্যতের আলোচনার জন্য সময় দেবে, যাতে একটি বড় চুক্তির আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধান করা যায়।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, এর আগে প্রাথমিকভাবে ২৬ শতাংশ শুল্কের প্রস্তাব করা হলেও নতুন চুক্তি অনুযায়ী শুল্কের হার ২০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হতে পারে। এতে উভয় পক্ষই চূড়ান্ত চুক্তির অংশ হিসেবে শুল্কের হার নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারবে। এই চুক্তিটি যদি চূড়ান্ত হয়, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি করা অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে ভারতও অন্তর্ভুক্ত হবে।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সপ্তাহে অনেক দেশের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উচ্চ শুল্ক আরোপ করে বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছেন। যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। হোয়াইট হাউস ও তাদের বাণিজ্য বিভাগও তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের অবস্থান
ভিয়েতনামের সঙ্গে ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত চুক্তির (যেখানে ২০ শতাংশ শুল্ক ছিল) চেয়ে আরও ভালো শর্তে একটি চুক্তি চাইছে ভারত। যদিও ভিয়েতনাম এই হার আরও কমানোর চেষ্টা করছে। ট্রাম্পের সঙ্গে যুক্তরাজ্যও বাণিজ্য চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প এনবিসি নিউজকে বলেছিলেন, যেসব বাণিজ্যিক অংশীদারের শুল্কের হার এখনও জানানো হয়নি, তাদের বেশিরভাগের ওপর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন। প্রায় সব মার্কিন বাণিজ্যিক অংশীদারের জন্য বর্তমানে সর্বনিম্ন শুল্কের হার ১০ শতাংশ। এশিয়ার দেশগুলোর জন্য এখন পর্যন্ত ঘোষিত শুল্কের হার সবচেয়ে কম (২০ শতাংশ) ভিয়েতনামের ও ফিলিপাইনের জন্য। এছাড়া লাওস ও মিয়ানমারের জন্য ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার জন্য ৩৬ শতাংশ এবং বাংলাদেশের জন্য ৩৫ শতাংশ শুল্কের কথা জানান ট্রাম্প।
আলোচনায় অমীমাংসিত বিষয়
এই বছরের শুরুতেই হোয়াইট হাউজের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করা প্রথম দেশগুলোর মধ্যে ছিল ভারত। যদিও ট্রাম্প এই সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি প্রায় হয়ে গেছে। তবে তিনি ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের অংশগ্রহণের জন্য অতিরিক্ত শুল্কের হুমকিও দিয়েছিলেন। শিগগিরই ভারতীয় আলোচকদের একটি দল ওয়াশিংটন সফর করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যাতে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া যায়।
তবে উভয় পক্ষ কয়েকটি মূল বিষয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়াশিংটনের দাবি, ভারত তার বাজার জেনেটিক্যালি মডিফাই করা ফসলের জন্য উন্মুক্ত করবে, যা কৃষকদের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। এছাড়া কৃষি খাতে অ-শুল্ক বাধা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়াসহ কিছু বিতর্কিত বিষয়ে দুই দেশ এখনও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।