‘ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে অস্ত্র ছাড়বে না হিজবুল্লাহ’

লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর উপ-প্রধান শেখ নাইম কাসেম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে তাদের সংগঠন অস্ত্র ছাড়বে না। তিনি বলেন, হিজবুল্লাহ “লেবাননের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়” লড়াই চালিয়ে যাবে এবং এই প্রতিরোধ নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে হতে হবে। খবর আল জাজিরার।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) একটি গোপন স্থান থেকে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে কাসেম বলেন, “প্রতিরোধ অক্ষ শক্তিশালী, সুসংগঠিত এবং লেবাননের পক্ষে লড়াই করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত… হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লেবাননকে রক্ষার জন্য বিপুল ত্যাগ স্বীকার করেছে।”
তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইসরায়েল যদি আবার পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু করে, তবে তাদের ওপর মিসাইল বৃষ্টি নামবে। আট মাস ধরে তারা যে নিরাপত্তা গড়ে তুলেছে, তা এক ঘণ্টার মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
মঙ্গলবার লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউনের সভাপতিত্বে ছয় ঘণ্টাব্যাপী এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, চলতি বছরের মধ্যেই দেশের সব অস্ত্রভাণ্ডার রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনবে লেবানন সেনাবাহিনী।
প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বৈঠক শেষে বলেন, “অস্ত্রের একক মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে থাকবে – এটি সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।”
এই সিদ্ধান্তের আগে সোমবার (৪ আগস্ট) রাতে বৈরুতে হিজবুল্লাহ সমর্থকরা নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন ।
এই উত্তেজনার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, যারা চায় হিজবুল্লাহ নিরস্ত্রীকরণ করুক। অন্যদিকে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়মিতভাবে লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল।
হিজবুল্লাহ গত বছরের যুদ্ধে অনেক নেতা হারিয়েছে, হাজার হাজার যোদ্ধা ও লেবানিজ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং শিয়া সম্প্রদায়সহ বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, তারা অস্ত্র ছাড়বে না। সংগঠনটি দাবি করছে, যদি তারা নিরস্ত্রীকরণ না করে, তবে আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে – একে তারা “চাঁদাবাজি” বলে আখ্যা দিয়েছে।
হিজবুল্লাহর সংসদ সদস্য আলী ফায়াদ দেশটির জাতীয় সংসদে বলেছেন, নিরস্ত্রীকরণের আগে ইসরায়েলকে লেবাননি ভূখণ্ড থেকে পুরোপুরি সরে যেতে হবে, বন্দি লেবানিজদের মুক্তি দিতে হবে এবং স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে হবে।
লেবাননের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখন নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে আগ্রহী, এমনকি প্রয়োজনে জোর করে তা বাস্তবায়নের কথাও বলছেন কেউ কেউ।
এমপি এলিয়াস হানকাশ বলেন, “যদি রাষ্ট্রের অধীনে অস্ত্র আনতে কিছু মূল্য দিতে হয়, তবে তা মেনে নেওয়া ভালো। তবে এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সচেষ্ট রয়েছি।”
কাসেম বলেন, ২০০৮ সালে সরকারের একবার টেলিকম নেটওয়ার্ক বন্ধের সিদ্ধান্তেই রাস্তায় রক্তক্ষয় হয়েছিল। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীলভাবে অস্ত্র ইস্যু মোকাবিলার আহ্বান জানান তিনি।
লেবাননের কৃষিমন্ত্রী নিজার হানি জানান, সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই শত শত হিজবুল্লাহ ঘাঁটি ও অস্ত্র ডিপো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, হিজবুল্লাহ লেবাননের “জাতীয় গঠনের অংশ” এবং ভূমি মুক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকার যদি আনুষ্ঠানিকভাবে হিজবুল্লাহ নিরস্ত্রীকরণের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে।

আল জাজিরার প্রতিবেদক জেইনা খদর বলেন, “হিজবুল্লাহ সামরিকভাবে দুর্বল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তারা এখনো রাষ্ট্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী শিয়া রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আছে। তারা বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের লোক বসিয়েছে।”
লেবাননের রাজনৈতিক অঙ্গন বহু বছর ধরেই হিজবুল্লাহর অস্তিত্ব ও নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে বিভক্ত। এখন আন্তর্জাতিক চাপ ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে সেই বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।