হিরোশিমায় পারমাণবিক হামলার ৮০ বছর আজ

আজ থেকে ঠিক ৮০ বছর আগে জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলা হয়েছিল। প্রতিবারের মতো এবারও ভয়াবহ সেই দিনের কথা স্মরণ করে বুধবার (৬ আগস্ট) দিনটি পালিত হচ্ছে। তবে বেঁচে যাওয়া মানুষরা বিশ্বজুড়ে বতর্মান পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি নিয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি)।
বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের গড় বয়স এখন ৮৬ বছরের বেশি। তাদের সংখ্যাও দ্রুত কমে আসছে। তাই তাদের অনেকেই মনে করছেন, এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ আর বেশি দিন থাকবে না।
বেঁচে ফেরা ৯৪ বছর বয়সী মিনোরু সুজুতো স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানোর পর বলেন, ‘১০ বা ২০ বছর পর এই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা বলার জন্য আর কেউ হয়তো থাকবে না। তাই আমি যতটা পারি আমার গল্পটি বলতে চাই।’
৭৪ বছর বয়সী কাজুও মিয়োশি তার দাদা ও দুই চাচাতো ভাইকে স্মরণ করে প্রার্থনা করেন, যেন এমন ভুল আর কখনও না হয়। তিনি বলেন, আমাদের পারমাণবিক অস্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় বোমা হামলায় শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়। এতে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়। তিন দিন পর নাগাসাকিতে দ্বিতীয় বোমা হামলায় আরও ৭০ হাজার মানুষ নিহত হন। ১৫ আগস্ট জাপান আত্মসমর্পণ করে, যার মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে।
হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের প্রেক্ষাপটে। তিনি বলেন, বিগত দিনের ঘটনাগুলো থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শেখা উচিত।
গত বছর পারমাণবিক অস্ত্র বিলুপ্তির প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী জাপানের সংগঠন ‘নিহন হিদাঙ্কিও’। সংগঠনটি বলছে, আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। আমরা আগের চেয়েও বেশি পারমাণবিক হুমকির মুখে রয়েছি।
এদিন অনুষ্ঠানে রাশিয়া, বেলারুশসহ রেকর্ড ১২০টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে (যে সময় বোমাটি ফেলা হয়েছিল) একটি শান্তি ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা, শহরের মেয়র ও অন্যান্য কর্মকর্তারা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বেঁচে যাওয়া মানুষদের সাক্ষ্য এবং শান্তির বার্তা বয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, অতীতকে স্মরণ করা হলো বর্তমান এবং ভবিষ্যতে শান্তি রক্ষা ও প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা তার ভাষণে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার জন্য কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির কথা উল্লেখ করেননি।

শিগেরু ইশিবা বলেন, তার দেশ অপারমাণবিক নীতি মেনে চললেও পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশীদের দ্বারা ঘেরা থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ছত্রছায়ার ওপর তাদের নির্ভরতা যৌক্তিক। তিনি দাবি করেন, এই অবস্থান পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার জাপানের লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।