গাজায় নিহত আরও ৭৩, চলমান দুর্ভিক্ষ নিয়ে ইইউসহ ২৬ দেশের নিন্দা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। একই সময়ে ইসরায়েলি অবরোধে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ছয় বছরের এক শিশুও রয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) নিহতদের মধ্যে ১৯ জন ত্রাণ প্রত্যাশী ছিলেন। এ ঘটনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডাসহ ২৬ দেশ যৌথ বিবৃতিতে গাজার “অকল্পনীয় দুর্ভোগ” এবং “চলমান দুর্ভিক্ষ” বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। খবর আল জাজিরার।
উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিংয়ের কাছে ত্রাণ প্রত্যাশীদের ওপর হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দেন। এক ব্যক্তি বলেন, “চারপাশে গুলি, মানুষ মরছে, গুলির মধ্যে দিয়ে হামাগুড়ি দিচ্ছিলাম… এক টুকরো রুটি এখন জীবনের বিনিময়ে পাওয়া যায়।”
মে মাসের শেষ দিক থেকে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ত্রাণ প্রত্যাশীদের মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ৮৩৮-এ পৌঁছেছে।
নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স জানায়, অপুষ্টিতে ছয় বছরের জামাল ফাদি আল-নাজ্জার ও ৩০ বছরের উইসাম আবু মোহসেন মারা গেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধাজনিত মৃত্যু ২২৭-এ দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে শতাধিক শিশু রয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে দেশগুলো ইসরায়েলের খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে “প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগ” নিন্দা করে এবং সব আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার কার্যক্রম অনুমোদন দেওয়ার আহ্বান জানায়।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইসরায়েলের পরিকল্পিত গাজা সিটি দখলের আগে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুদের অনুমতি চেয়েছে। সংস্থার প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেন, “মানবিক সহায়তা অনুমোদনের কথা শোনা গেলেও তা বাস্তবে খুব সীমিত।”
গাজা সিটিতে গত তিন দিন ধরে তীব্র বোমাবর্ষণ চলছে বলে জানিয়েছে সিভিল ডিফেন্স। তাদের এক সদস্য আবদুর রহমান মাহের আবু লাতিফা ও তার বাবা-মা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সিভিল ডিফেন্সের ১৩৭ সদস্য নিহত হয়েছেন।
আল-মাওয়াসি এলাকার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে এক পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন, যা ইসরায়েল পূর্বে “নিরাপদ অঞ্চল” ঘোষণা করেছিল।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল ৪৩০টিরও বেশি খাদ্যপণ্যের প্রবেশ বন্ধ করেছে, যার মধ্যে হিমায়িত মাংস, মাছ, চিজ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, সবজি ও ফল রয়েছে। এছাড়া ৪৪টি খাদ্য ব্যাংক ও ৫৭টি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করে ধ্বংস করা হয়েছে।

গাজা সিটি দখল ও প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনার জন্যও ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে বলেছে, “অধিকৃত শক্তি ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও চিকিৎসা বঞ্চনাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার ৫৯৯ জন নিহত এবং ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮ জন আহত হয়েছেন।