গাজায় জরুরি উদ্ধারকর্মীদের ওপরও হামলা করছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে জরুরি উদ্ধারকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) গাজার জেইতুন পাড়ায় আহতদের উদ্ধারে যাওয়া একটি অ্যাম্বুলেন্সে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায় বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল। একইসঙ্গে ইসরায়েলি ড্রোন থেকে প্রচারপত্র ফেলে এলাকাবাসীকে জোরপূর্বক সরে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটিতে বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে চারটি এলাকায় “দিন-রাত নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণ” চালানো হচ্ছে। আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজযুম জানান, এটি আসলে “নাগরিক জীবনের পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ, যাতে করে মানুষ আর কোনোদিনই এই এলাকায় ফিরে আসতে না পারে।”
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্রটি দখল করে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করতে চাইছেন। তবে এরই মধ্যে ইসরায়েলি নিরাপত্তা মহল, জিম্মিদের পরিবার, দেশি-বিদেশি বহু সংগঠন ও রাষ্ট্র এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে।
একই সময়ে গাজার বিভিন্ন স্থানে বোমাবর্ষণে অন্তত ৪৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জন ছিলেন খাদ্য সহায়তার সন্ধানকারী। দুইটি হাসপাতালেও হামলা হয়েছে। গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে একজন নিহত হয়েছেন, আর দেইর আল-বালাহর আল-আকসা হাসপাতালে ড্রোন হামলায় অন্তত দুজন নিহত হন।
গাজার তুফফাহ পাড়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে ৪৬ দিন আটকে থাকা একটি পরিবারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এক নারী জানান, বোমাবর্ষণে তার ভাইয়ের লাশ এবং বাবার দেহাবশেষ ৩১ জনের সঙ্গে মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল। অবরোধের কারণে উদ্ধারযন্ত্র না থাকায় এতদিন তাদের বের করা সম্ভব হয়নি।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ১ হাজার ৭৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৯৪ জন জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রের কাছাকাছি এবং ৭৬৬ জন ত্রাণ কাফেলার পথে নিহত হয়েছেন। বেশিরভাগ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, খাদ্যাভাব ও অনাহারে এখন পর্যন্ত ২৪০ জন মারা গেছেন, এর মধ্যে ১০৭ জন শিশু। জাতিসংঘ জানিয়েছে, শুধু গাজা সিটি এলাকায়ই প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে।
অবরোধকবলিত গাজায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করা প্রয়োজন। কিন্তু ইসরায়েল বলছে বৃহস্পতিবার মাত্র ৩১০টি ট্রাক প্রবেশ করেছে, যা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী প্রয়োজনের মাত্র এক-ষষ্ঠাংশ।

গ্রীষ্মের তীব্র গরমে মানুষগুলো এখন দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে। খান ইউনুসের বাসিন্দা হোসনি শাহিন বলেন, “এই পানি খেলে শিশু থেকে বড় সবাই পেটের অসুখে ভোগে। বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়েই সবচেয়ে বেশি ভয় হয়।”