আবহাওয়া বার্তায় বলা তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম লাগে কেন?

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সাধারণত দুটি তাপমাত্রা দেখানো হয়— একটি প্রকৃত তাপমাত্রা ও অন্যটি ‘অনুভূত হচ্ছে’ (ফিলস লাইক) তাপমাত্রা। পূর্বাভাসে প্রকৃত তাপমাত্রার পাশাপাশি প্রায়ই ‘মনে হচ্ছে’ (ফিলস লাইক) তাপমাত্রা বা হিট ইনডেক্স দেখানো হয়। কিন্তু কেন এমন হয়? এর কারণ, আমাদের শরীর তাপমাত্রা কেমন অনুভব করে তা শুধু বাতাসের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে না, বরং বাতাসের আর্দ্রতা, বাতাসের গতি ও সরাসরি সূর্যের আলোর মতো বিষয়গুলোও এর সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে, যেখানে আর্দ্রতা অনেক বেশি সেখানে এই পার্থক্য আরও বেশি অনুভূত হয়।
প্রকৃত তাপমাত্রা পরিমাপের পদ্ধতি
সাধারণত, আবহাওয়া স্টেশনগুলো মাটি থেকে প্রায় ১.২৫-২ মিটার (৪-৬.৫ ফুট) উঁচুতে থাকা থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপ করে। এই পরিমাপটি বাতাসের প্রকৃত তাপমাত্রা প্রকাশ করে, যা মানুষের অনুভূতির কাছাকাছি। তবে, এই পরিমাপটি অন্যান্য পরিবেশগত প্রভাবকে অন্তর্ভুক্ত করে না, যে কারণে ‘অনুভূত হচ্ছে’ (ফিলস লাইক) তাপমাত্রা ভিন্ন হতে পারে।
যে কারণে তাপমাত্রা বেশি গরম মনে হয়
আবহাওয়াবিদরা মনে করেন, বাতাসের তাপমাত্রা ও ‘অনুভূত হচ্ছে’ (ফিলস লাইক) তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো :
আর্দ্রতা : বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে আমাদের শরীর ঘামের মাধ্যমে ঠান্ডা হতে পারে না। সাধারণত ঘাম বাষ্পীভূত হয়ে শরীর থেকে তাপ বের করে দেয়, কিন্তু আর্দ্র আবহাওয়ায় এই প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ফলে শরীর আরও গরম হয়ে যায়।

বাতাসের গতি : গরম আবহাওয়ায় হালকা বাতাস ঘামকে বাষ্পীভূত হতে সাহায্য করে, যা শরীরকে ঠান্ডা করে তোলে। কিন্তু বাতাস যদি স্থির থাকে, তাহলে তা ঘামের বাষ্পীভবন কমিয়ে দেয় ও গরমের অনুভূতি বাড়ায়।
সরাসরি সূর্যের আলো : ছায়ার চেয়ে সরাসরি সূর্যের আলোতে বেশি গরম লাগে, কারণ আমাদের শরীর সূর্যের বিকিরণ সরাসরি শোষণ করে।
বাংলাদেশে গরমের অনুভূতি কেন বেশি?
বাংলাদেশের মতো ক্রান্তীয় অঞ্চলে গরমের অনুভূতি বেশি হওয়ার পেছনে উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও কিছু স্থানীয় কারণ রয়েছে—
উচ্চ আর্দ্রতা : বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা ৭০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত থাকে। এর ফলে তাপমাত্রা মাঝারি হলেও ভ্যাপসা গরমের কারণে অস্বস্তি বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় ও আর্দ্রতা ৮০ শতাংশ থাকে, তাহলে তা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো গরম অনুভূত হতে পারে।
শহুরে পরিবেশ : ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে অপরিকল্পিত নগরায়ন, গাছপালা ও জলাশয়ের অভাব এবং কংক্রিটের কাঠামো তাপ ধরে রাখে। এতে শহরে ‘আরবান হিট আইল্যান্ড’ (ইউএসআই) তৈরি হয়, যা গ্রামীণ এলাকার চেয়ে তাপমাত্রা বেশি করে তোলে।

দূষণ : যানবাহনের ধোঁয়া ও কারখানার দূষণ থেকে সৃষ্ট উষ্ণ বাতাস মাটির কাছাকাছি একটি স্তর তৈরি করে, যা তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঋতুচক্রের স্বাভাবিকতা নষ্ট হচ্ছে, যার কারণে শুষ্ক ঋতু দীর্ঘায়িত হচ্ছে ও প্রচণ্ড গরমের তীব্রতা বাড়ছে।