নেপালে ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে বাধা

নেপালের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দেশটিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনিবন্ধিত ২৬টি প্ল্যাটফর্মের এক্সেস ব্লক করে দেওয়ার জন্য টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছে।
এই নির্দেশনার পরপরই আজ শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) নেপালে ফেসবুকসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ কারণে দেশটির লাখ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বিভ্রান্ত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। খবর এএফপির।
মন্ত্রণালয় যে ২৬টি প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে নিবন্ধন না করার অভিযোগ এনেছে তার মধ্যে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেটার মালিকানাধীন ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স ও লিঙ্কডইনের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলো।
নেপালের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুধীর পরাডুলি এ প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) নির্দেশ আসার পর আমরা ইউআরএলগুলো বন্ধ করে দিয়েছি, কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ করতে সময় লাগবে। এক্ষেত্রে আমরা কী পদ্ধতি ব্যবহার করব তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্স-এর মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোর নেপালে লাখ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছে, যারা বিনোদন, সংবাদ ও ব্যবসার জন্য এগুলোর উপর নির্ভর করে।
ফেসবুকের মাধ্যমে গহনা ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করা ২৫ বছর বয়সী জেনিশা জোশি বলেন, ‘সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমি খুব মর্মাহত। কারণ আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা চালাই এবং এটি বন্ধ হলে আমাদের ব্যবসায় প্রভাব পড়বে। ফেসবুক আমাদের বিদেশে থাকা ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও সাহায্য করে। তাই এটি নিষিদ্ধ করা উচিত নয়।’
গত সপ্তাহে দেশটির মন্ত্রিসভা কোম্পানিগুলোকে নেপালে নিবন্ধন করতে, একটি যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করতে, একজন স্থানীয় অভিযোগ নিরসন কর্মকর্তা এবং একজন কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগ করতে সাত দিনের সময় দেয়। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর। সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিবন্ধন করতে এবং ব্যবসার জন্য স্থানীয় উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করার বাধ্যবাধকতা রেখে ২০২৩ সালে একটি নির্দেশনা জারি করে নেপাল।
এরপরও শুক্রবার যেসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যাচ্ছিল সেখানে জনগণের পরিষ্কার হতাশা ছিল। বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য সুমন শ্রেষ্ঠা বলেন, সরকার বাক-স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে জনগণের ওপর কী প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে তারা ভ্রুক্ষেপ করছে না।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, এই পদক্ষেপ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। তিনি নেপাল সরকারকে আদেশটি প্রত্যাহার করারও আহ্বান জানান।

এদিকে, নেপাল পুলিশের সাইবার ব্যুরো ব্যক্তিগত তথ্য এবং নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) নির্বিচারে ব্যবহার না করার বিষয়ে সতর্ক করেছে।
নেপালের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গজেন্দ্র কুমার ঠাকুর বলেন, বন্ধের পর কিছু প্ল্যাটফর্ম তদন্তের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে। নেপাল অতীতেও জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে।
অনলাইন জালিয়াতি এবং অর্থ পাচারের বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে গত জুলাইয়ে নেপালজুড়ে টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের আগস্টে টিকটকের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ নেপালের নিয়মাবলী মেনে চলতে সম্মত হওয়ার পর সরকার নয় মাসের জন্য টিকটকের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।