ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা নিয়ে পাঁচটি উত্তরবিহীন প্রশ্ন

গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ২০ দফা প্রস্তাবে বেশ কিছু অস্পষ্ট ধারা রয়েছে, যা ফিলিস্তিন ও সমগ্র অঞ্চলের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে ট্রাম্প এ পরিকল্পনাকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনও অস্পষ্ট এবং বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। খবর আল জাজিরার।
১. গাজা কীভাবে শাসিত হবে?
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গাজা একটি “অস্থায়ী, টেকনোক্র্যাটিক ও অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটি” দ্বারা পরিচালিত হবে। তবে এ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া, সদস্য নির্বাচনের নিয়ম বা কারা এদের মনোনয়ন দেবে—এসব বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
এছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার নেতৃত্ব দেবেন একটি “বোর্ড অব পিস”, যা এই কমিটিকে তদারকি করবে। কিন্তু এ বোর্ড ও কমিটির সম্পর্কের ধরন কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার স্তর সম্পর্কেও পরিকল্পনায় কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নেই।
২. ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) কি ভূমিকা পাবে?
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে গাজা তাদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কে বা কোন প্রতিষ্ঠান এ সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে বলে স্বীকৃতি দেবে, কিংবা কোন মানদণ্ড পূরণ করতে হবে—এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
তাছাড়া পরিকল্পনায় গাজাকে আলাদা একটি সত্তা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাকে পশ্চিম তীরসহ বৃহত্তর ফিলিস্তিনের সঙ্গে একীভূত করার কোনো স্পষ্ট উল্লেখ নেই।
নেতানিয়াহু সরাসরি বলেছেন—গাজা “না হামাস, না ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ” দ্বারা পরিচালিত হবে।
৩. আন্তর্জাতিক বাহিনী কীভাবে গঠিত হবে?
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গাজায় নিরাপত্তার জন্য একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েন করা হবে। কিন্তু কোন দেশ থেকে এ বাহিনী আসবে, তাদের ম্যান্ডেট কী হবে—এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।
তারা কি সেনাবাহিনী হিসেবে কাজ করবে, নাকি কেবল পুলিশ বা পর্যবেক্ষক বাহিনী হবে? হামাসের বিরুদ্ধে তাদের ভূমিকা কী হবে? এমনকি প্রয়োজনে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধেও কি তারা ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় দাঁড়াতে পারবে—এসব প্রশ্নও অমীমাংসিত।
৪. ইসরায়েল কবে সেনা প্রত্যাহার করবে?
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল “মানদণ্ড, মাইলফলক ও নিরস্ত্রীকরণের সময়সীমা অনুযায়ী” গাজা থেকে সরে যাবে। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি বা মানদণ্ড উল্লেখ করা হয়নি।
বরং বলা হয়েছে, গাজা “সম্পূর্ণ নিরাপদ” না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল একটি “নিরাপত্তা বেষ্টনী” ধরে রাখবে। তবে কখন এ শর্ত পূরণ হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং কে তা নির্ধারণ করবে—এ বিষয়ে কোনো উত্তর নেই।

৫. ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কি সম্ভব?
ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অনেক দেশ বোকামি করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।” পরিকল্পনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ শর্তসাপেক্ষ ও অস্পষ্টভাবে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, গাজা উন্নয়ন ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে “একটি সম্ভাব্য পথ” তৈরি হতে পারে।
তবে এ ক্ষেত্রে “স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অধিকার” সরাসরি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, বরং এটিকে কেবল ফিলিস্তিনিদের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।