যে আবিষ্কারের জন্য এবার চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো

কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের নোবেল অ্যাসেম্বলি ২০২৫ সালের জন্য শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসা বিজ্ঞানে দুই মার্কিন ও এক জাপানি বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যে তিন বিজ্ঞানীকে এবার পুরস্কার দেওয়া হলো তারা হলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজির মেরি ই. ব্রুনকো, যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর সোনোমা বায়োথেরাপিউটিক্সের ফ্রেড রামসডেল এবং জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিমোন সাকাগুচি।
এই তিন বিজ্ঞানীকে পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স বা শরীরের প্রান্তীয় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার সহনশীলতা সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত হতে হবে, যদি তা না হয় তবে রোগ আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করবে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হাজার হাজার অণুজীব থেকে আমাদের রক্ষা করে। এসব অণুজীব আমাদের শরীরে আক্রমণের চেষ্টা করে। এই অণুজীবগুলোর চেহারা ভিন্ন হলেও ছদ্মবেশে তারা মানুষের কোষের সাথে মিল রেখে আলাদা বৈশিষ্ট্য তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন তৈরি হয়, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কীভাবে নির্ধারণ করে যে এটিকে কী আক্রমণ করতে হবে বা কী রক্ষা করতে হবে?
মেরি ব্রুনকো, ফ্রেড রামসডেল এবং শিমোন সাকাগুচি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ‘নিরাপত্তা প্রহরী’ হিসেকে কাজ করা রেগুলেটরি কোষগুলোকে চিহ্নিত করেছেন, যা ইমিউন কোষকে আমাদের শরীরের আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখে।
এ বিষয়ে নোবেল কমিটির চেয়ার ওলে ক্যামপো বলেন, ‘তাদের এই আবিষ্কারগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং কেন আমাদের সবার মারাত্মক অটোইমিউন রোগ হয় না, তা বোঝানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
শিমোন সাকাগুচি ১৯৯৫ সালে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করার সময় স্রোতের বিপরীতে ছিলেন। সেই সময় অনেক গবেষক নিশ্চিত ছিলেন যে শুধুমাত্র থাইমাসে কেন্দ্রীয় সহনশীলতা নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্ষতিকারক ইমিউন কোষগুলি নির্মূল হওয়ার ফলেই আক্রমণবিরোধী সহনশীলতা তৈরি হয়। সাকাগুচি দেখিয়েছিলেন যে, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও জটিল এবং তিনি ইমিউন কোষের একটি অজানা শ্রেণি আবিষ্কার করেন, যা শরীরকে অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করে।
মেরি ব্রুনকো এবং ফ্রেড র্যামসডেল ২০০১ সালে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করেন, তারা ব্যাখ্যা করেন, কেন একটি নির্দিষ্ট ইঁদুরের প্রজাতি অটোইমিউন রোগের প্রতি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তারা আবিষ্কার করেন ইঁদুরগুলোর একটি জিনে মিউটেশন রয়েছে, তারা যার নাম দেন ফক্সপি-থ্রি। তারা আরও দেখান মানুষের এই জিনের সমতুল্য জিনে মিউটেশনের কারণে একটি গুরুতর অটোইমিউন রোগ হয়।
এর দুই বছর পর, শিমোন সাকাগুচি এই আবিষ্কারগুলোকে সংযুক্ত করতে সক্ষম হন। তিনি প্রমাণ করেন ফক্সপি-থ্রি জিনটিই সেই কোষগুলির বিকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে যা তিনি ১৯৯৫ সালে চিহ্নিত করেছিলেন। এই কোষগুলি, যা এখন রেগুলেটরি টি কোষ নামে পরিচিত, অন্যান্য ইমিউন কোষগুলির উপর নজর রাখে এবং নিশ্চিত করে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের নিজস্ব টিস্যুগুলির প্রতি সহনশীল থাকে।
এই বিজয়ীদের আবিষ্কারগুলো পেরিফেরাল টলারেন্স ক্ষেত্রটির সূচনা করে, যা ক্যান্সার এবং অটোইমিউন রোগের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে উদ্দীপনা জুগিয়েছে। এটি আরও সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপনে সহায়ক হতে পারে। এই চিকিৎসাগুলির মধ্যে কয়েকটি বর্তমানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্যে রয়েছে।