বদলে যাচ্ছে ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস মাঠ

সার্কিট হাউস ও মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্মৃতির ম্যুরাল স্থাপন, মাঠের নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি, অবৈধ দখল রোধ ও দখলদার উচ্ছেদ, নিরাপদ প্রাতঃভ্রমণ নিশ্চিত করা, গবাদিপশুর অবাধ বিচরণ বন্ধ করাসহ নানা পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি জনবান্ধব মেগা প্রজেক্ট।
ময়মনসিংহের সদ্য বিদায়ী কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান সার্কিট হাউস মাঠের বদলে যাওয়া ইতিবাচক পরিকল্পনার স্বপ্নদ্রষ্টা। গত ১ জুন তিনি এ প্রজেক্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।
এ ব্যাপারে এনটিভি অনলাইনকে খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মাঠের চারপাশে বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। আর যাতে বেদখল না হয়, তা ঠেকাতে হবে। মাঠের মধ্যে অবাধ গবাদিপশুর বিচরণ, শিক্ষানবিশ গাড়ি চালনার ফলে মাঠের মধ্যে থাকা ক্রিকেট পিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা ঠেকানো যাবে। সে বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মাঠের দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন হলেও তা হবে ইতিবাচক ও নান্দনিক। সার্কিট হাউস মাঠ এবং পার্শ্ববর্তী পার্কে প্রাতঃভ্রমণকারী নারী-পুরুষকে অনেক সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। মাঠের চারপাশে তাদের জন্য থাকবে নিরাপদ ওয়াক ওয়ে। এ জন্য মাঠের এক পাশে তাদের জন্য আলাদা ওয়াশ বোর্ড থাকবে। নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের জন্য থাকবে দুটি গভীর নলকূপ।’

আরো কী আছে বদলে যাওয়া মাঠের প্রজেক্টে? এমন প্রশ্নের জবাবে খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চারপাশে তিন ফিট উঁচু দেয়ালের উপরে থাকবে সাড়ে তিন ফুট উঁচু এসএস বারের ফেনসি নান্দনিক গ্রিল, সংযোজিত হবে নানা রঙের বাতি। দুপাশে থাকবে দেশি-বিদেশি বাহারি ফুলের বাগান। থাকবে পরিবেশবান্ধব নানা জাতের গাছ। স্থান পাবে ঔষধি গাছও। মাঠের এক পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতিকৃতি দিয়ে একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মসহ সবাই তাঁর পরিবারকে এক নজরে চিনতে পারবে, শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।’
মাঠের চারপাশে ওয়াল হবে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সার্কিট হাউসে অবস্থান করেন। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য মাঠের চারপাশে নিশ্ছিদ্র নান্দনিক নিরাপত্তা বেষ্টনী জরুরি। তবে মাঠে প্রবেশের জন্য থাকবে চাহিদা অনুযায়ী ছোট বড় অনেক প্রবেশ পথ। খেলাধুলা দর্শনের জন্যও কোনো সমস্যা হবে না।’ তিনি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, খুলনার হাদিস পার্কের আদলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠকে নান্দনিকতার ছোঁয়ায় আরো দর্শনীয় করে তুলতে চান।
এ কাজে খরচ হবে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। ম্যুরাল তৈরিতেই ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি টাকা। কাজ বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত বিভাগ।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ক্রীড়া সংগঠক দীপু সায়েম ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি মোহিত উর রহমান তাঁর ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘মাঠের চারপাশে দেয়াল তোলার পেছনে হয়তো মহৎ কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তবে সেটি হবে আত্মতৃপ্তি আর চোখধরা সৌন্দর্য বিভাজনের দেয়াল।’ তাই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল আলম বলেন, ‘খেলোয়াড় ও দর্শকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্যই মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মানুষ না জেনেই ভুল বুঝতেছে। মাঠের বিষয়ে নেওয়া উদ্যোগ সম্পূর্ণ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এ মাঠকে কেন্দ্র করে খেলাধুলাসহ সব ধরনের কার্যক্রম স্বাভাবিক ঠিক আগের মতোই চলবে।’
এ প্রকল্পকে সদ্য বিদায়ী বিভাগীয় কমিশনার ইতিবাচক, জনকল্যাণমূলক ও মানুষের প্রকল্প আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘পার্ক ও সার্কিট হাউস নিয়ে মানুষের যে আবেগ রয়েছে, তা কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ করা হবে না।’