শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/07/01/photo-1498882456.jpg)
হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার এক বছর পূর্তিতে সেখানে জঙ্গিদের হাতে নিহত দেশি-বিদেশিদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হচ্ছে।
আজ শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের এ রেস্তোরাঁয় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিদেশি কূটনীতিক, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, নিহতদের পরিবারের স্বজনসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ উপলক্ষে আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টার জন্য হলিজান আর্টিজান রেস্তোরাঁ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার কথা রয়েছে।
সকাল ৮টার কিছু পরে প্রথমে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন, জাপানের রাষ্ট্রদূত মাশাতো ওয়ানাতাবে এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি মিকিও হাতাডেয়া। তাঁরা শ্রদ্ধাস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে অল্প সময় নিয়ে হলি আর্টিজান ত্যাগ করেন।
এ দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি জোনের) ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সকাল ৮টায় হলি আর্টিজানের সামনে মূল সড়কে সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশিদের অনুরোধে তাঁদের ছবি তোলা যাবে না, ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে বিদেশিরা পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় ছবি না তোলার আবেদন করছেন। তাঁদের অনুরোধে ছবি না তোলাই উত্তম।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতালি ও জাপানি দূতাবাসের সঙ্গে যৌথ আয়োজনে নানা কর্মসূচি পালন করবে। ইতালির নয় নাগরিকের স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতালি সরকারের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছে। ইতালি দূতাবাস এবং বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে হবে ওই স্মরণ অনুষ্ঠান। জাপানের সাত নাগরিকের স্মরণে শোকসভার আয়োজন করছে জাপান দূতাবাস ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সর্ববৃহৎ এ ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ১ জুলাই। সেদিন ছিল শুক্রবার। রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের এ রেস্তোরাঁয় পাঁচজনের একটি জঙ্গিদল অতর্কিত হামলা চালায়। রেস্তোরাঁয় থাকা ২০ জন বিদেশি নাগরিকসহ ৩০-৩৫ জনকে জিম্মি করে রাখে এবং রাতভর হত্যাযজ্ঞ চালায়।
পরের দিন শনিবার সকালে রেস্তোরাঁয় জিম্মিদের উদ্ধারে কমান্ডো অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। তবে এর আগে শুক্রবার রাতেই জঙ্গিদের সঙ্গে গোলাগুলিতে ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান নিহত হন। অভিযান শেষে যৌথ বাহিনী বিদেশি নাগরিকসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত এবং মোট ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত ২০ জনের মধ্যে দুজন বাংলাদেশি, একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান, নয়জন ইতালিয়ান, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।
নিহত দুই বাংলাদেশি হলেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেন এবং ডেএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত আখন্দ। এ ছাড়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান অবিন্তা কবির ও ভারতীয় তরুণী তারুশি জেইনও নিহতদের মধ্যে ছিলেন। অবিন্তা কবির এলিগ্যান্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান রুবা আহম্মেদের একমাত্র মেয়ে। তিনি নিহত হওয়ার মাত্র চারদিন আগে ২৭ জুন বাবার সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে এসেছিলেন।
নিহত ইতালিয়ান নয় নাগরিক হলেন- আদেলে পুগলিসি, মারকো তোন্দা, ক্লদিয়া মারিয়া ডি’আন্তোনা, নাদিয়া বেনেদেত্তি, ভিনসেঞ্জো ডি’আলেস্ত্রো, মারিয়া রিভোলি, ক্রিস্তিয়ান রসি, ক্লদিয়া কাপেলি ও সিমোনা মন্তি।
নিহত সাত জাপানি নাগরিক হলেন-নাকা হিরোশি, সাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই, হাসিমাতো হিদেকো ও কোয়ো ওগাসাওয়ার।
এ হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও ন্যক্কারজনক এ জঙ্গি হামলার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দিনটিকে শোক ও ক্ষোভের সঙ্গে স্মরণ করতে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় নিহতদের স্মরণে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আগামীকাল বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শান্তি সমাবেশ করবে। গণজাগরণ মঞ্চ আগামী ৪ জুলাই বিকেল ৪টায় শাহবাগে নাগরিক শোক সমাবেশ করবে। সমাবেশ শেষে নিহতদের স্মরণে আলোক প্রজ্বালন করে গণজাগরণ মঞ্চ শ্রদ্ধা জানাবে।