কথা না শোনায় মাদ্রাসায় গলা কেটে হত্যা!

একই মাদ্রাসায় পড়ত তারা। ১২ বছরের আবদুর রহমান জিদানের চেয়ে সে বয়সে চার বছরের বড় ছিল। জিদানকে কাপড় আনা, খাবার আনার জন্য আদেশ দিত। না শুনলে মারধর করত।
গত সোমবার ১২ বছর বয়সী জিদানের মরদেহ পাওয়া যায় ওই মাদ্রাসারই সেপটিক ট্যাংকে। গলাটা কাটা ছিল।
কী এমন কথা শোনেনি জিদান যে ওকে হত্যা করে ফেলা হলো? জিদানকে হুকুম দেওয়া ওই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিক্ষার্থী স্বীকারও করেছে জিদানকে হত্যার কথা।
জিদানকে ‘অনৈতিক প্রস্তাব’ দিয়েছিল ওই শিক্ষার্থী। জিদান রাজি হয়নি। ওই শিক্ষার্থীর সন্দেহ হয়েছিল, জিদান অন্য কারো সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। এরই কারণে ফল কাটার ছুরি দিয়ে জিদানকে হত্যা করে।
গত রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলিস্তানের মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র আবদুর রহমান জিদান খুন হয়। তার মরদেহ পাওয়া যায় মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাংকে। ঘটনার পরই জিদানকে ফুট ফরমাশ খাটানো ওই শিক্ষার্থী পলাতক ছিল। জিদানের বাবা মো. হাফেজ উদ্দিন ওই শিক্ষার্থীকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা করেন।
আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানিয়েছে, এক অভিযানে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। র্যাব ৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান জানান, আসামি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে এবং ঘটনার কারণ ও বিবরণও দিয়েছে।
জানা যায়, আসামি জিদানকে বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার আদেশ দিত। না শুনলে আসামি বেশ রাগ করত। গত ১৬ নভেম্বর উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। ওই দিন ওই আসামি জিদানকে চড় দেয়। এ ব্যাপারে জিদান মাদ্রাসার শিক্ষক ইয়াছিন হুজুরের কাছে নালিশ করে। পরে ওই শিক্ষক আসামিকে সতর্ক করে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আসামি প্রায়ই জিদানকে ‘অনৈতিক সম্পর্কে’র প্রস্তাব দিত। রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় আসামি। পরে অন্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে জিদানের ঘনিষ্ঠতা বাড়লে আসামির মধ্যে ‘ক্ষোভ ও জিঘাংসা’র সৃষ্টি হয়।
আসামি জানায়, জিদান অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছে এ কারণে ‘প্রতিহিংসার বশবর্তী’ হয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তবে মাদ্রাসার শিক্ষক ইয়াছিন হুজুরের কাছে নালিশ দেওয়ার পরই জিদানকে হত্যার পরিকল্পনা করে ওই আসামি।
যেভাবে ঘটল নৃশংস ঘটনা!
গত রোববার রাতে নিজের ফল কাটার ছুরিটিকে ধারালো করে ওই আসামি। রাত ১০টার দিকে খাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। আর রাত দেড়টার দিকে আসামি শিশু জিদানের মুখ চেপে ধরে গলায় ছুরি দিয়ে পোঁচ দেয়। জিদানের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সে কোলে করে জিদানের মৃতদেহ সেপটিক ট্যাংকের কাছে নিয়ে যায় এবং ভেতরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।
ওই সময় মাদ্রাসার ওই কক্ষটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী শিশু ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। জিদানের গোঙানিতে একাধিক শিশু জেগে উঠলেও আসামির ভয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি।