‘অশুভ শক্তি’ তাড়াতে সাঁওতাল নারীকে পিটিয়ে হত্যা

‘অশুভ শক্তি’ তাড়ানোর নামে রাতভর নির্যাতনের পর রাজশাহীর তানোর উপজেলার এক সাঁওতাল বৃদ্ধা মারা গেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার সকালে উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের মুণ্ডুমালায় ‘সাধুজান মেরি ভিয়ান্নি গির্জা’ থেকে পুলিশ ষাটোর্ধ্ব ফুলমণি মুরমুর লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এঁরা হলেন ফাল্গুনি মুরমু (১৩), স্বপ্না হেমব্রম (১২), বিলাসী সরেন (২৫), ববি মারডি (১৯) ও রতন হাসদা (১৮)।
তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, নিহতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত ফুলমণির মেয়ে আরতি মুরমু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে তাঁর মা জ্বর-সর্দিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর ওপর অশুভ শক্তির প্রভাব আছে চিন্তা করে ঝাড়ফুঁক করানোর জন্য তাঁকে গতকাল রাত ১২টায় গির্জায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গির্জার ফাদার মাইকেল কোডাইয়া জানায়, ফুলমণির শরীরে অশুভ শক্তি ভর করেছে। গির্জার শিক্ষক বিলাসী সরেনকে নির্দেশ দেওয়া হয় ফুলমণির শরীর থেকে অশুভ শক্তি দূর করতে। শুরু হয় ঝাড়ফুঁকের কাজ। বিলাসীসহ পাঁচ যুবক-যুবতী ঝাঁড়ফুক শুরু করে। তাদের কেউ স্যান্ডেল দিয়ে, কেউ ঝাড়ু দিয়ে ফুলমণিকে মারতে থাকে। শেষে পাঁচজন মিলে ফুলমণিকে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষে এবং পিটিয়ে গুরুতর আহত করে বলে জানান আরতি মুরমু।
নির্যাতনের একপর্যায়ে ফুলমণির অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়লে আরতি তাঁর মাকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য গির্জার ফাদারের কাছে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা কোনোকিছু না শুনে চিকিৎসার নামে নির্যাতন চালিয়ে যেতে থাকেন। একপর্যায়ে রাতে ফুলমণির মৃত্যু হয়।
আরতি আরো জানান, মা মারা গেলে সকালে তিনি মুণ্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে ‘সাধুজান মেরি ভিয়ান্নি গির্জা’র ফাদার মাইকেল কোডাইয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা দীপক হাসদা জানান, মুণ্ডুমালার ‘সাধুজান মেরি ভিয়ান্নি গির্জা’য় কয়েকজন যুবক-যুবতী থাকেন। তাঁরা সেখানে উপাসনা করেন এবং আশপাশের লোকজন অসুস্থ হলে চিকিৎসার নামে ঝাড়ফুঁক দেন। আশপাশের সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর লোকজন এসব চিকিৎসায় বিশ্বাস করে।