সাড়ে চার বছর পর মায়ের কাছে ফিরল যুথি

সাড়ে চার বছর পর মাকে ফিরে পেয়েছে আমেনা খাতুন যুথি (১২)। বুধবার আদালতের আদেশ নিয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কর্মকর্তারা মা ও ভাইয়ের হাতে তুলে দেয় কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্টের যুথিকে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ও মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) শেল্টার হোমের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুথির বয়স যখন ছয় বছর তখন কোনো কারণে তার বাবা আব্দুস সাত্তার ও মা সালমা খাতুনের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। যুথির কপালে জোটে সৎমা। ছোট্ট যুথি সৎ মায়ের জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চাচার সঙ্গে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে গৃহপরিচারিকার কাজ করা শুরু করে শিশু যুথি। কিন্তু সেখানেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। বাড়ির কর্তা মাঝেমধ্যেই মারধর করতো যুথিকে।
২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি। যুথির বয়স তখন আট বছর। সেদিনও গৃহকর্তার হাতে মারধরের শিকার হয় ছোট্ট গৃহকর্মী যুথি। সৎ মায়ের কারণে ঠাঁই হয়নি বাড়িতে। ঢাকায় গিয়েও গৃহকর্তার অত্যাচার। এ থেকে বাঁচতে অজানার উদ্দেশে পা বাড়ায় যুথি। সবার অজান্তে গৃহকর্তার বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা চলে যায় কমলাপুর রেলস্টেশনে। উঠে পড়ে রাজশাহীগামী রাতের ট্রেনে। পরদিন ভোরে যুথিকে নিয়ে ট্রেন চলে আসে রাজশাহী। এ সময় ফুপিয়ে কান্না করছিল সে। যুথিকে সে অবস্থায় দেখে এক যাত্রী ট্রেন থেকে নামিয়ে যুথিকে নিয়ে সোজা চলে যায় রাজশাহী নগরীর শাহ মখদুম থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহীর মানবাধিকার সংস্থা এসিডির শেল্টার হোমে।
বুধবার বিকেলে আমেনা খাতুন যুথিকে (১২) তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার পর এসিডির শেল্টার হোমের ম্যানেজার পুষ্প রাণী বিশ্বাস যুথির শেল্টার হোমে আসার ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন।
পুষ্প রাণী বিশ্বাস বলেন, ‘যুথির গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্টে। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি শেল্টার হোমে আসার পর থেকেই সে আর বাড়িতে ফিরে যেতে চাচ্ছিল না। তবে তিন থেকে চার মাস থেকে সে তার মাকে ফিরে পেতে আরজি জানায়। তার আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে যুথির পরিবারের খোঁজ করতে মহানগর পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারকে অনুরোধ জানায় এসিডি। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কর্মকর্তারা যুথির পরিবারের খোঁজ পায়। যুথির পরিবারকে আসতে বলা হয় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। তারা এলে চার বছর সাত মাস পর আদালতের মাধ্যমে মহানগর পুলিশ বুধবার যুথির মা সালমা খাতুন, তার সেই সৎমা ও ভাইয়ের হাতে তুলে দেয় যুথিকে।