বিদেশির ডলার ছিনতাই, ৫ পুলিশ প্রত্যাহার

যশোরের ঝিকরগাছায় সুইডেন ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকের কাছ থেকে তিন হাজার ইউএস ডলার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত উপপরিদর্শক (এসআই) এজাজ আহমেদসহ পাঁচ পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়া অপর চার কনস্টেবল হলেন আজিজুর রহমান, মামুন হোসেন, বাবর আলী ও জিয়াউল হাসান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বিনা অনুমতিতে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে যাত্রীদের তল্লাশির নামে হয়রানি করার অভিযোগে এসআই এজাজসহ পাঁচ কনস্টেবলকে লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনার শিকার খুকুমনি পারভীনের স্বামী মিজানুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, ছিনিয়ে নেওয়া তিন হাজার মার্কিন ডলার অজ্ঞাত যুবকের মাধ্যমে শুক্রবার সকালে ফেরত পাঠিয়েছেন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা।
শুক্রবার বিকেলে সুইডিশ নাগরিক মিজানুর রহমান টেলিফোনে জানান, শুক্রবার সকালে অজ্ঞাত এক যুবক মোটরসাইকেলে তাঁর বাড়িতে এসে একটি খামে করে তিন হাজার ডলার ফেরত দেন। যুবকটি জানান, ‘দারোগা স্যার এই ডলার আপনার কাছে দিতে বলেছে।’ এর পরপরই যুবকটি একটি সাদা কাগজ বের করেন বলেন, ‘এখানে একটু লিখে দেন যে, আপনাদের ডলার পুলিশ নেয়নি। ব্যাগের ভেতরেই ছিল। খোঁজাখুঁজির পর আপনারা ব্যাগের ভেতরেই ডলারগুলো পেয়েছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে আপনাদের কোনো অভিযোগ নেই।’
কিন্তু মিজানুর রহমান এসব কথা লিখতে অস্বীকার করে যুবকটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। কিছুক্ষণ পর কনেস্টবল আজিজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি লোহাগড়া থেকে দুজন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি মিজানুরের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া শহরে যান এবং একই রকমের আবদার করেন। তাঁরা জানান, ‘আপনারা এই লিখিত না দিলে দারোগা এজাজসহ তার সঙ্গীয় ফোর্সদের চাকরি থাকবে না।’ তারা লিখিত দেওয়ার জন্য অনুনয়-বিনয় করেন। কিন্তু মিজানুর বা তাঁর স্ত্রী খুকুমনি পারভীন লিখিত দিতে অস্বীকার করেন।
অভিযোগে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারত থেকে দেশে ফেরার পথে যশোরের ঝিকরগাছা থানার এসআই এজাজসহ সঙ্গীরা খুকুমনি পারভীনের ব্যাগ তল্লাশির নামে তিন হাজার ইউএস ডলার ছিনিয়ে নেন।
ঘটনার পর সেদিন সন্ধ্যায় খুকুমনি পারভীন ও তাঁর স্বামী মিজানুর রহমান যশোর প্রেসক্লাবে এসে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের তাঁরা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘মাটির টানে দেশে আসি। কিন্তু দেশের ভাইদের কাছ থেকে যে এমন ব্যবহার পাব তা ভাবতেই পারিনি।’
খুকুমনি পারভীন বলেন, ‘দারোগা যে ভাষায় আমার সাথে আচরণ করেছেন তা বলা সম্ভব নয়। কোনো সভ্য দেশের পুলিশ এ ভাষায় কথা বলতে পারে তা চিন্তার মধ্যে ছিল না।’ তিনি পুলিশের এই আচরণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে দেশে আসার আগে দুইবার ভাবব।’ এরপর বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা থানার ওসি মোল্লা খবির আহমেদ বলেন, ‘অভিযোগকারীদের বর্ণনা সঠিক নয়। পুলিশ তাঁদের তল্লাশি করেছে ঠিক। কিন্তু সুইডেন নাগরিক পরিচয় শোনার পর পরই তাঁদের সসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হয়।’