১৩ বছর পর চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নে নির্বাচন

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের দুটি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) দীর্ঘ ১৩ বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৩১ অক্টোবর পদ্মা-মেঘনার তীরঘেঁষা আলাওলপুর ও কুচাইপট্টি ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত হবে ওই নির্বাচন। সীমানাসংক্রান্ত জটিলতা উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়ায় নির্বাচনের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন নিয়ে এলাকার ভোটার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে, কোর্ট কাচারি আর নির্বাচন কমিশনের লাল ফিতার দৌরাত্ম্য পেরিয়ে ১৩ বছর পর আগামী ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের দুর্গম চরাঞ্চল আলাওলপুর ও কুচাইপট্টি ইউনিয়নের নির্বাচন। ২০০৩ সালে সর্বশেষ নির্বাচন হয় ইউনিয়ন দুটিতে। আলাওলপুর ইউপির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বেপারী এবং কুচাইপট্টি ইউপির চেয়ারম্যান আবুল বাশার মুন্সি বাদী হয়ে চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার হাইমচর ইউনিয়ন ও নীলকোমল ইউনিয়নের সঙ্গে সীমানা জটিলতা দেখিয়ে উচ্চ আদালতে রিট দায়েরের কারণেই মূলত নির্বাচন বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বেশ উৎসবমুখর পরিবেশেই চলছে নির্বাচনী প্রচার। প্রার্থী ও তাঁদের স্বজন-সমর্থকরা বাড়ি বাড়ি মানুষের দোয়া ও সমর্থন আদায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে এলাকার হাট-বাজার, গ্রাম মহল্লা। প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন উঠান বৈঠক করে।
আলাওলপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ, বিএনপি উভয় দলের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে মোট সাতজন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিযোগিতা করেছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. ওসমান বেপারী, বিএনপির প্রার্থী কস্তুরুবা ইসলাম সাথী, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বাচ্চু, মো. জাকির হোসেন ও মো. রাসেল মিয়া।
এদিকে কুচাইপট্টি ইউনিয়নে মাত্র তিনজন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবুল বাশার মুন্সি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. নাসির উদ্দিন স্বপন এবং বিএনপির প্রার্থী মো. আলমগীর হোসেন। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এই ইউনিয়নে বিএনপির শক্ত অবস্থান না থাকায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যেই লড়াই হবে বেশি।
চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাড়াও আলাওলপুর ইউনিয়নে ৯ ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ৩৬ জন পুরুষ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১১ জন নারী প্রার্থী এবং কুচাইপট্টি ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ৩৪ জন পুরুষ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১০ জন নারী সদস্য প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
শুক্রবার আলাওলপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আমজাদ হোসেন বেপারীর সমর্থনে আচরণবিধি ভঙ্গ করে সহস্রাধিক মানুষ মিছিল করে গরিবেরচর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ করছে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আমজাদ হোসেন বেপারী বলেন, ‘আমি কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ করিনি। এলাকার মানুষ নৌকার কথা শুনলে ঘরে বসে থাকতে পারে না। তাই হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিল সমাবেশ করেছে।’
এই ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী কস্তুরুবা ইসলাম সাথী অভিযোগ করে বলেন, ‘নৌকা সমর্থিত লোকেরা তাঁর কর্মীদের মাইকিং করা ও ব্যানার পোস্টার লাগাতে বাধা দিচ্ছে, এমনকি তাঁর ব্যবহৃত গাড়িটিও ভাঙচুর করেছে। আগামী ৩১ অক্টোবর কাউকে ধানের শীষে ভোট দিতে দেওয়া হবে না এবং বিএনপির ভোটারদের টেবিলের ওপর ব্যালট পেপারে সিল মারতে বাধ্য করানো হবে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
কুচাইপট্টি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল বাশার মুন্সির মেয়ের জামাই গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোসাইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নাসির উদ্দিন বিধি ভঙ্গ করে লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তার শ্বশুড়ের পক্ষে গণসংযোগ করছে। এতে সাধারণ ভোটাররা ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে।’
এ ব্যাপারে গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোসাইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘পার্টির সেক্রেটারি হিসেবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে যাওয়াটা আমার সাংবিধানিক অধিকার এবং দলীয় দায়িত্ব। আমার লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও তা আমি এলাকায় গেলে সঙ্গে বহন করি না। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
শরীয়তপুরের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘১৩ বছর পরে গোসাইরহাটের দুটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় মানুষ খুব উল্লসিত। যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহন করা যায় সে জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও আর্মস ব্যাটালিয়নের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। এমনকি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবেন।’