বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সরকারকে আরও সময় দেওয়ার এবং ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে শান্ত থাকতে দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতিতে দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আমার আহ্বান, সরকারকে আরেকটু সময় দিন। আরেকটু ধৈর্যের পরিচয় দিন। শান্ত থাকুন। পরিস্থিতির ওপর সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি রাখুন।’

দেশবাসীকে সতর্ক করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটি বিষয়ে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কয়েকটি কথা বলতে চাই। দলমত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যাত্রাপথে ষড়যন্ত্রকারীদের বাধা বিচক্ষণতার সঙ্গে অতিক্রম করতে ব্যর্থ হলে স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণকে চরম মূল্য দিতে হবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বিতাড়িত স্বৈরাচারের পলায়নের পর গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে একদিকে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে অধিকার বঞ্চিত মানুষের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব, অপরদিকে পলাতক স্বৈরাচারের প্রতিশোধের আগুন সবমিলিয়ে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি বিরাজমান।’

পলাতক স্বৈরাচার গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অনিয়মের পাহাড় তৈরি করেছিল এবং জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সেই হারানো অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা আর অনিয়মের পাহাড় ভাঙতে স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ‘অবৈধ ক্ষমতা আর অবৈধ সুবিধা হারানো পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে জনগণের দাবি আদায়ের এই আন্দোলনকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে’ উল্লেখ করে ষড়যন্ত্রকারীরা আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে বলে সতর্ক করেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যু কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে চক্রান্তের জাল বিছিয়েছে। সারা দেশে একটি পরিকল্পিত নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। জনগণের মনে অসহিষ্ণুতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।’

‘গত কয়েকদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই’ উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারীদের অপতৎপরতা উদ্বেগজনক হয়ে দেখা দিয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, ‘মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে জনতার আন্দোলনে যেই শিক্ষার্থীরা সামনের কাতারে থেকে সাহসী ভূমিকা রেখেছিল, হঠাৎ করেই এখন তারা কেন একে অপরের বিরুদ্ধে এতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠল? জনমনে এই প্রশ্নটিই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।’ তিনি প্রশ্ন তুলেন, ‘ছাত্র-জনতার এমন একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা কেন শিক্ষাঙ্গনে ভাঙচুর চালাবে? কেন আগুন ধরিয়ে দেবে?’

এসব ঘটনা স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের যৌক্তিক আন্দোলন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ সাবোটাজ করছে কিনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করতে হবে। পরিস্থিতির ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচার দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে কিনা সরকারকে এ বিষয়টিও গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তারেক রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সরকার পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে জনগণ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে।’ পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা জনগণের অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে বলে সতর্ক করেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা লাঘবে করণীয় নির্ধারণই হোক সরকারের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মনে রাখা দরকার, বর্তমান বাজার পরিস্থিতির কারণে দেশের কোটি কোটি পরিবারকে প্রতিদিন সাধ এবং সাধ্যের সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে। পারিবারিক খরচ মেটাতে এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে অনেকের কাছেই সংস্কারের চেয়ে সংসার অগ্রাধিকার হয়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়।’

বাজার নিয়ন্ত্রণ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে না পারলে ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে এই স্পর্শকাতর ইস্যু ব্যবহার করার সুযোগ নিতে পারে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা সেই সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে।

জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়ে ‘জনগণকে আস্থায় রাখার’ এবং ‘জনগণের আস্থায় থাকার’ জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

সরকারের কোনো কাজ কিংবা কথায় যেন হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার স্বৈরাচার বিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরার কারণ না হয়, সেই বিষয়ে সরকারকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবাসীর প্রতি বিনীত আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘দাবি আদায়ে আন্দোলন করা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সুতরাং, অবশ্যই জনগণের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে।’ তবে এই আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি এবং পলাতক স্বৈরাচার যাতে গণ-অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যকে লক্ষ্যচ্যুত করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা যাতে জনগণের ন্যায্য দাবি দাওয়া আদায়ের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখার ওপর জোর দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশে-বিদেশে পালিয়ে কিংবা লুকিয়ে থাকা দুর্বৃত্তরা যাতে জনগণের যৌক্তিক আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে নাশকতা করতে না পারে, সেই ব্যাপারে সরকার ও জনগণকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।’

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়েই এ সরকার পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জনগণের যেকোনো অভাব অভিযোগ যথানিয়মে সরকারের কাছে উপস্থাপন করলে ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার সুযোগ পাবে না। হাজারো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত মাফিয়ামুক্ত বাংলাদেশে সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচার কায়েম করতে হলে দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় স্বাধীনতাপ্রিয় প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা জরুরি।’