কম খরচে মুনাফা বেশি, কার্পাস তুলায় কৃষকের মুখে হাসি

মাঠজুড়ে ছোট ছোট গাছের সাদা সাদা ফুল ফাগুনের বাতাসে দোল খাচ্ছে। কিছু ফুল উড়ে গিয়ে সবুজ ঘাসেও ছড়িয়ে পড়ছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কোনো ফুলের বাগান। এই দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত না হলে অনেকেই এটিকে ফুল ভেবে ভুল করতে পারেন। এটি হচ্ছে কার্পাস তুলা।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ফসলের মাঠে এখন এমন দৃশ্য খুবই সাধারণ। উপজেলার প্রায় ২৫০ কৃষক কার্পাস তুলা চাষ করছেন। কম খরচ, ঝুঁকিমুক্ত এবং বেশি মুনাফার কারণে প্রতি বছরই কার্পাস তুলার চাষ বাড়ছে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষক মাসুম, রিপন, সোহেল, শাহাবুল, রশিদুল, আমিরুলের মতো অনেকেই উৎসাহিত হয়েছেন কার্পাস তুলা চাষ করছেন।
মোকারিমপুর ইউনিয়নের চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘তুলা চাষে খরচ এবং ঝুঁকি দুই-ই কম। বিঘাপ্রতি রোপণ থেকে ফসল ঘরে তোলার খরচ হয় মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক কম। গত মৌসুমে প্রতি বিঘায় ১৮ মণ তুলা পেয়েছি, আর ভালো ফলন হলে তা ২০ মণ পর্যন্ত হয়। প্রতি মণ চার হাজার টাকা দরে তুলা বিক্রি হয়ে থাকে। সরকারিভাবে তুলার বাজার মূল্য নির্ধারণের পর কুষ্টিয়া জিনিং মালিক সমিতি কৃষকদের কাছ থেকে নগদ অর্থে তুলা কিনে নেয়। তাই বাজারজাত করতেও কোনো সমস্যা হয় না।’
চাষি আমিরুল ইসলাম এ বছর তিন বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন এবং ফলন ভালো হওয়ায় ভালো মুনাফার আশা করছেন।
মাসুম হোসেন নামের অন্য এক চাষি বলেন, ‘তুলা চাষে লোকসানের সম্ভাবনা খুব কম। তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে আমাদের কীটনাশক ফ্রি দেয়। গত বছর ভালো লাভ করেছি, এবারও ফলন ভালো হয়েছে।’
চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৬০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, যা প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভেড়ামারা উপজেলার কটন ইউনিট অফিসার মনজুয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘তুলা চাষের জন্য উঁচু জমি প্রয়োজন, তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জমি নির্বাচন করা হয়। উপজেলার গোলাপনগর, গোপীনাথপুর, ফকিরাবাদ, ব্রিজের মাঠ এবং রামকৃষ্ণপুর এলাকায় তুলা চাষ বেশি হচ্ছে। কারণ এসব জায়গার মাটি তুলা চাষের জন্য উপযোগী। তিনি আরও জানান, কৃষকদের সরকারি সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং ফলনও ভালো হয়েছে।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘বড় পরিসরে তুলা চাষ করলে দেশের তুলা আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে। কৃষকদের উৎসাহিত করতে সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
স্থানীয়রা বলছে, কার্পাস তুলা চাষের এই অগ্রগতি শুধু কৃষকদেরই আয়ের পথ খুলে দেয়নি, দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। খরচ কম, ঝুঁকি কম এবং নিশ্চিত বাজার থাকায় তুলা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই জনপদে।