জমিতে পড়ে আছে মিষ্টি কুমড়া, নষ্ট হচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

কিশোরগঞ্জের ইটনায় উপজেলার এলংজুরী হাওরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বাজারে চাহিদা কম এবং যথাযথ দাম না পাওয়ায় জমিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার কৃষকদের কষ্টের ফসল। লাভের আশায় চাষ করা ফসল এখন কৃষকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে এলংজুরী হাওরের মিষ্টি কুমড়ার জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট-বড় আকৃতির মিষ্টি কুমড়া হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে পড়ে আছে। বাজারে দাম কম থাকায় যথাসময়ে উত্তোলন না করার ফলে কৃষকদের জমিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া। এতে চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
মিষ্টি কুমড়া চাষি এনামুল বলেন, ‘১০ লাখ টাকা খরচ করে বিভিন্ন জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করে বিপাকে পড়েছি। ফলন ভালো হলেও বাজারে চাহিদা কম এবং দাম না থাকায় প্রচুর পরিমাণে লোকসান গুনতে হবে। যে ফসল হয়েছিল আশা করেছিলাম ২০-২৫ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে পারব, কিন্তু দাম না থাকায় পাঁচ লাখ টাকাও বিক্রি করতে পারব না।’
আরেক মিষ্টি কুমড়া চাষি পিয়াস মিয়া বলেন, ‘কৃষকরা কষ্ট করে ফসল উৎপাদনের সময় সারের দাম, বীজের দাম ও শ্রমিক খরচ বেশি থাকে। কিন্তু যখন আমরা ফলন বিক্রি করতে যাই তখন দাম থাকে না। লাখ লাখ টাকা খরচ করে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি, এখন জমিতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। পাইকার আসে না। আসলেও যে দাম বলে এই দামে বিক্রি করলে খরচও উঠবে না।’

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ইটনা উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ধানের পাশাপাশি প্রায় ২০৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করা হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, হাওরে প্রান্তিক কৃষকদের ফসল উৎপাদনের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কীভাবে জমিতে কম সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে বেশি ফসল উৎপাদন করা যায়। এই বিষয়ে মাঠে এসে পরামর্শ দিচ্ছি। ধানের পাশাপাশি হাওরে ভুট্টা ও মিষ্টি কুমড়ার চাষ বৃদ্ধি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ উজ্জ্বল শাহা জানান, হাওরের চলতি মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট চাষিরা। পরামর্শ দিচ্ছি বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভর করে ফসল উৎপাদন করার জন্য। এতে লাভবান হবে চাষিরা।
কৃষিবিদ উজ্জ্বল শাহা আরও জানান, হাওরে হিমাগার তৈরি হলে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি কমে যেত।
এদিকে, হাওরে কৃষকরা হিমাগার তৈরির দাবি জানিয়ে এলেও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কৃষি মন্ত্রণালয়। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে হাওরে হিমাগার তৈরির দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।