খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত বিএনপি, রোডম্যাপ চূড়ান্ত

প্রায় চার মাস পর ফের কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে দুই পুত্রবধূও দেশে ফিরবেন। তাঁকে জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত দলের নেতাকর্মীরা। রাজধানীর সড়কে কে, কোথায় দাঁড়াবেন সেই রোডম্যাপও চূড়ান্ত।
আগামীকাল সোমবার (৫ মে) লন্ডন থেকে রওনা হবেন বেগম খালেদা জিয়া। বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন আগামী মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সচিব মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আগামী ৬ মে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করবেন। তাঁকে দলের পক্ষ থেকে অভ্যর্থনা জানানো হবে। ইতোমধ্যে সব প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে।
দলের চেয়ারপারসনকে ঢাকায় অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কে কোথায় অবস্থান করবেন তার একটি রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়ান হোটেল পর্যন্ত, ছাত্রদল লা মেরিডিয়ান হোটেল থেকে খিলক্ষেত, যুবদল খিলক্ষেত থেকে হোটেল রেডিসন, মহানগর দক্ষিণ বিএনপি হোটেল রেডিসন থেকে আর্মি স্টেডিয়াম, স্বেচ্ছাসেবক দল আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী কবরস্থান,কৃষক দল বনানী কবরস্থান থেকে কাকলী মোড়, শ্রমিক দল কাকলী মোড় থেকে বনানী শেরাটন হোটেল, ওলামা দল, তাঁতীদল, জাসাস ও মৎসজীবী দল বনানী শেরাটন হোটেল থেকে বনানী কাঁচাবাজার, মুক্তিযোদ্ধা দলসহ সব পেশাজীবী সংগঠন বনানী কাঁচাবাজার থেকে গুলশান ২, মহিলা দল গুলশান ২ গোলচত্বর থেকে গুলশান এভিনিউ রোডে দাঁড়াবে।
একই সঙ্গে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মী যার যার সুবিধামতস্থানে অবস্থান দাঁড়াবেন।
বিমানবন্দর এবং চেয়ারপারসনের বাসভবনে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সব নেতাকর্মী দলীয় পতাকা এবং জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তার একপাশে দাঁড়াবে। চেয়ারপারসনের গাড়ির সঙ্গে মোটরসাইকেল বহর এবং হাঁটা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ।
ঢাকা মহানগর বিএনপির (উত্তর) আহ্বায়ক আনিনুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা রাস্তার দুই পাশে অবস্থান করবেন। আমরা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ যাতে না হয় সেভাবে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি।
ঢাকা মহানগরের (উত্তর) যুবদলের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দীন জুয়েল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আমাদের আবেগের জায়গা। আমাদের মমতাময়ী মা। আমাদের মাকে ঢাকায় অভ্যর্থনা জানাতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছি।
প্রায় চার মাস আগে গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে যান। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে রাজকীয় বহরের বিশেষ বিমান দিয়েছেন। ওই বিশেষ বিমানে (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) করে তিনি লন্ডন যান।
সেখানে দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। পরে গত ২৫ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় যান তিনি। এরপর থেকে সেখানেই তিনি ছিলেন। ছেলের বাসাতেই তাঁর চিকিৎসা চলে।
বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।
২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে কয়েক দফা আবেদন করা হয়; কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি সেই সরকার।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।