আওয়ামী লীগ : দেশের ইতিহাসে একমাত্র নিবন্ধন স্থগিত দল

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র দল, যাদের নিবন্ধন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে কোনো দলের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়নি। স্থগিত করার কারণে নিবন্ধন বাতিল না হলেও নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়ল আওয়ামী লীগ। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রমে সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। কোন গ্রাউন্ডে ইসি নিবন্ধন স্থগিত করল, তা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ইসি। সেখানে বলা হয়েছে, যেহেতু সরকার দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে, সেহেতু ইসিও নিবন্ধন স্থগিত করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এসআরও নম্বর ১৩৭-আইন/২০২৫, তারিখ ১২ মে ২০২৫ মূলে সরকার সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা-১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেহেতু, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন (নম্বর-০০৬ তারিখ: ০৩/১১/২০০৮) এতদ্বারা স্থগিত করল।’
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে ইসি। এর আগে কোনো দলের নিবন্ধন এভাবে স্থগিত করা হয়নি। সাধারণত শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা ও আদালতের নির্দেশে ইসি নিবন্ধন বাতিল করে থাকে। এ ছাড়া সরকার কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বাধ্যবাধকতা থাকে। কিন্তু, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। হয়েছে দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। সেজন্য কমিশনও প্রথমবারের মতো দল নিবন্ধন স্থগিত করল।
গতকাল সোমবার (১২ মে) আওয়ামী লীগের নিবন্ধনের বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক কমিশন সভা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সভা শেষে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, ‘উই আর ওয়েটিং ফর দি গেজেট নোটিফিকেশন টু কাম। আকাশে সূর্য উঠলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংক্রান্ত গেজেট হাতে পেলেই নিবন্ধন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এরপর বিকেল ৫টার দিকে সরকার আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারপর বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
সিইসির সঙ্গে ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম, রহমানেল মাসউদ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদ অংশ নেন।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আপনারা জানেন, আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার অঙ্গ সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। তার ধারাবাহিকতায় ইলেকশন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কোন গ্রাউন্ডে এই নিবন্ধন স্থগিত করা হলো জানতে চাইলে ইসি সচিব আকতার আহমেদ বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে প্রজ্ঞাপন তার ধারাবাহিকতায় আমরা এটা করেছি।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন দলীয় প্রতীককে অংশগ্রণে নির্বাচনমুখী দলগুলোর মাঝে নিবন্ধন প্রথা চালু করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই বছর ৩ নভেম্বর ছয় নম্বর দল হিসেবে নিবন্ধন পায় দেশের প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগ।
এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। ফলে ইসির নিবন্ধিত দলের মধ্যে নিজস্ব প্রতীকে অংশ নেওয়ার দল রইল ৪৯টি।