কৃষি প্রযুক্তি বিস্তারে পার্টনার ফিল্ড স্কুল, বদলে যাচ্ছে কৃষকের জীবন

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কৃষি প্রযুক্তি বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পার্টনার ফিল্ড স্কুল। কৃষকদের আধুনিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে এই স্কুলগুলো নিয়মিত প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, মাঠ দিবস, ফিল্ড ওরিয়েন্টেশন প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে কৃষকেরা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে হয়ে উঠছেন দক্ষ, সচেতন ও উৎপাদনমুখী।
প্রচলিত ধান আর সীমিত সবজি চাষের বাইরে গিয়ে এখন ভৈরবের কৃষকরা উৎপাদন করছেন চাহিদাসম্পন্ন নানাবিধ সবজি, তেল ও মসলা জাতীয় ফসল। এতে যেমন উৎপাদন বেড়েছে, তেমনি বাজার ব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠেছে সুষম শৃঙ্খলা। ফলে কৃষক পাচ্ছেন ফসলের ন্যায্য মূল্য, যা তাদের মাঝে কৃষির প্রতি আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলছে।
সরেজমিনে কয়েকটি পার্টনার ফিল্ড স্কুল ঘুরে দেখা যায়, মাঠজুড়ে ফলন্ত ফসল পাকা ধান, ভুট্টা, কচুরমুখী, লাউ, শসা, করলা, মরিচ, আদা ইত্যাদি। কাজের ব্যস্ততায় কৃষাণ-কৃষাণীদের যেন একটুও ফুরসত নেই।
তবুও প্রতি রোববার বেলা ১১টা বাজতেই তারা হাতে বই-খাতা, কলম নিয়ে ছুটে যান নির্দিষ্ট একজন কৃষকের বাড়িতে। সেখানে দলীয় ভিত্তিতে বসে ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল’ যা মূলত হাতে কলমে কৃষি শিক্ষা কেন্দ্র। প্রতিটি স্কুলে ২৫ জন করে কৃষক অংশগ্রহণ করেন।
এই স্কুলে কৃষকদের হাতে কলমে শেখানো হয় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, কৃষি ব্যবসার পরিকল্পনা, যান্ত্রিকীকরণ, বাণিজ্যিক কৃষির কৌশল, উন্নত বাজার ব্যবস্থাপনা ও উত্তম কৃষি চর্চা। প্রতিসপ্তাহে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা। পাঠদানের শেষে নেওয়া হয় সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা, যাতে শেখা বিষয় যাচাই করা যায়।
শিক্ষার্থী কৃষাণ-কৃষাণীরা জানান, এই স্কুলের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। তারা নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি, আধুনিক চাষাবাদ, সুষম সার ও বীজ ব্যবস্থাপনা, বালায় প্রতিরোধ, উৎপাদিত ফসলের বাজাদর পাওয়া-ইত্যাদি বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষাগ্রহণ করে বেশ উপকৃত হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভূঁইয়া জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তর পরিচালিত পার্টনার ফিল্ড স্কুলে কৃষির উন্নয়ন ও আধুনিকরণের লক্ষ্যে পুষ্টি উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি ও পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ বিষয়ে কৃষকদের শিক্ষা দেওয়া হয়। এই স্কুলের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষি ও কৃষকদের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ভৈরবে ১৮টি পার্টনার ফিল্ড স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। একেকটি স্কুলে ২৫ জন কৃষক থাকেন। তারা একেকটি ফসলের ওপর হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। আর এই শিক্ষার মাধ্যমে এখানে কৃষক ও কৃষির উন্নয়ন হচ্ছে। এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তাদের এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও উপকৃত হচ্ছেন।