ডিএসইতে ৯ মাস ১৮ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

নানা বিষয়ে অনাস্থায় পতনের কবলে দেশের পুঁজিবাজার। আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতন হয়েছে ১৬ পয়েন্ট। পতনের ধাক্কায় এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এদিন কমেছে ডিএসইর বাজার মূলধন। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৫৩ কোটি টাকা। ডিএসইর এই লেনদেন গত ৯ মাস ১৮ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন।
দেখা যায়, গত বছরের ৮ আগস্ট লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। মন্দার কারণে আজ লেনদেন হয়েছে ২৫৩ কোটি টাকা। গত ১৫ মে লেনদেন হয়েছিল ২৯৬ কোটি টাকার শেয়ার। অবশ্য গত ৪ আগস্ট লেনদেন হয়েছিল ২০৭ কোটি টাকা। গত ৮ আগস্ট সূচক ডিএসইএক্স ছিল পাঁচ হাজার ৯২৪ পয়েন্ট। ধারাবাহিক পতনে আজ সূচক ডিএসইএক্স দাড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৮৫ পয়েন্টে। এ সময়ের ব্যবধানে সূচক ডিএসইএক্স কমেছে এক হাজার ১৩৯ পয়েন্ট। গত ৮ আগস্ট বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ তিন হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। আজ বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৪৯ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। এসময়ের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৫৪ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা।
সূচক পতন ও লেনদেন মন্দা প্রসঙ্গে মতিঝিলে পাঁচ সিকিউরিটিজ হাউজের সাতজন বিনিয়োগকারী জানান, দেশের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতা। আবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে চলছে পুঁজিবাজার অংশীজনদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি। দিনদিন এই বৃত্ত বাড়ছে। যদিও এই বৃত্ত কমাতে সম্প্রতি বিএসইসি বসেছিল পুঁজিবাজার অংশীজনদের সঙ্গে। তাতে কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি। উল্টো এনিয়ে জড়িয়ে পড়েছে নানামুখী তর্কবির্তক। এতে বাড়ছে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা। এতে পরিবেশ আরও ঘোলাটে হয়ে পড়েছে। এছাড়া চলছে দেশের অর্থনীতিতে টানপোড়েনসহ নানা অনিশ্চয়তা। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের প্রতি চরম অনাস্থা। সবকিছু মিলিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। গত সাড়ে ৯ মাসে প্রায় ৮০ শতাংশ বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজির অর্ধেকের বেশি হারিয়ে পথে বসে পড়েছে। আরও পুঁজি হারানোর ভয়ে অনেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে চুপচাপ বসে আছেন। পরিস্থিতি পরিবর্তনের অপেক্ষা করছেন। অনেকে আবার বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। তারা বলেন, গত সাড়ে ৯ মাস ধরে পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ছে, পুঁজি ক্যাশ করার লক্ষ্যে তারা বিক্রি করছেন। এই কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
অনাস্থায় পুঁজিবাজার অবনতির দিকে যাচ্ছে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, পুঁজিবাজারের দীর্ঘদিন ধরে পতন চলছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে পুঁজিবাজারের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস হয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে সাধারণসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা এখন চরমে। পুঁজি হারিয়ে সবাই এখন অসহায়বোধ করছে। অনেকেই ক্ষতিতে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে পুঁজি নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। যারা আছে তারা প্রায় সবাই বিনিয়োগ না করে হাতগুটিয়ে আছেন।
আঞ্চলিক নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরায় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জানিয়ে বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, তারা বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে ধৈর্য ও সচেতনতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাজারে অস্থিরতা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।
ডিএসইতে আজ লেনদেন শেষে সূচক ডিএসইএক্স পতন হয়েছে ১৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট। দিনশেষে সূচকটি কমে দাঁড়ায় চার হাজার ৭৮৫ দশমিক ১১ পয়েন্টে। এদিন ডিএস৩০ সূচক চার দশমিক ৫৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৭৭ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্টে। আর ডিএসইএস সূচক তিন দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৬ দশমিক ৯০ পয়েন্টে।
আগের কর্মদিবস বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৩২৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার। আজ লেনদেন হয়েছে ২৫৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৪৯ হাজার ৮৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গতকাল বুধবার মূলধন ছিল ছয় লাখ ৫১ হাজার ১৭৬ কোটি ছয় ৫৭ টাকা। আজ লেনদেন হওয়া ৩৯১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৪টির এবং কমেছে ২০০টির। শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৭টির।