ইশরাকের শপথ
রায়ের কপি পাওয়ার পর করণীয় নির্ধারণ : ইসি

বিএনপিনেতা ইশরাক হোসেনের শপথ সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আমরা আপিল বিভাগের কোনো রায় এখনো (হাতে) পাইনি। রায়ের কপি পাওয়ার পরে কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে, আইনগত বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদের যা করণীয়, আমরা করব।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে বিএনপিনেতা ইশরাক হোসেনের শপথ আটকাতে আপিল বিভাগে যে আবেদন করা হয়েছিল, তা পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেওয়ার পর প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনার।
বৈঠকের পর অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সিইসি জানান, গণমাধ্যমের শিরোনাম দেখে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।
২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের পর শপথের বিষয়টি নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার, আইন মন্ত্রণালয়, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায়। সবশেষ ইশরাকের শপথ আটকাতে আপিল বিভাগে যে আবেদন করা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার তা পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এই জটিলতায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চ এই পর্যবেক্ষণ দেয়। কিন্তু তাতে ধোঁয়াশা কাটেনি, ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে বসার সুযোগ পাবেন কি না, তা স্পষ্ট হয়নি।
ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট জারির জন্য নির্বাচন কমিশন মন্ত্রণালয়ের কাছে যে মতামত চেয়েছিল, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। আপিল বিভাগ বলেছে, সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দিয়েছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ না করে নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে। অথচ সংবিধান অনুযায়ী উল্টো নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করার কথা মন্ত্রণালয়ের।
শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ইয়াসিন খান বলেন, ইশরাকের বিষয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। লিখিত রায় প্রকাশিত হলে আদালতের পর্যবেক্ষণ জানা যাবে। তবে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন যে গেজেট জারি করেছিল, আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করেনি।
যদিও এ মামলার দুই পক্ষের আইনজীবীরা এ বিষয়ে দুই রকম কথা বলেছেন।
রিটকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালত যেহেতু বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন, তারা মনে করছেন, ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের জারি করা গেজেটের আর কার্যকারিতা নেই।
অন্যদিকে ইশরাকের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলছেন, “গেজেট এখনও বহাল আছে। আমরা মনে করি, সরকার তাকে শপথ পড়াবে, এটা সরকারের দায়িত্ব ছিল তাকে শপথ পড়ানো।”
ইশরাক হোসেন যা বললেন
অন্তর্বর্তী সরকার আদালত ‘অবমাননা’ করছে দাবি করে ইশরাক হোসেন বলেছেন, শপথ পড়ানোর শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, অন্যথায় কাল (শুক্রবার) থেকে কঠোর আন্দোলন। টানা ১৬ দিন ধরে ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলন চলছে। ১৪ মে ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে সংগঠিত হয়ে আন্দোলনে নামেন সিটি করপোরেশনের কর্মচারী, ইশরাকের সমর্থকসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মাঝে ৪৮ ঘণ্টার বিরতির পর আবার কর্মসূচি চলছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুরে নগর ভবনের সামনে আন্দোলন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, আজকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে আমরা যে শুরু থেকে আইনের শাসনে বিশ্বাসী, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; বাংলাদেশে আইনের শাসনকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আদালতে যে মামলা করেছিলাম, পূর্ণাঙ্গ আস্থা আমরা রেখেছিলাম- সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নেতাকর্মীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
অন্তর্বর্তী সরকার শপথ না পড়িয়ে আদালত অবমাননার শামিল কাজ করেছে দাবি করে ইশরাক বলেন, এটাও প্রমাণিত হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় উপদেষ্টা আমার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন এবং নির্বাচন কমিশন, বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ করে আমাকে মেয়র হিসেবে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, আমাকে শপথ পড়ানোর যে দায়িত্ব ছিল; সেই দায়িত্ব পালনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন হয়। অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন।