নির্বাচন বিলম্বিত হলে গণতন্ত্র সংকটে পড়বে : আসাদুজ্জামান রিপন

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, ‘নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে। নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয় বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হবে।’
১৭ বছর পর আজ সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ কথা বলেন।
ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল আনুপাতিক হারে নির্বাচন চাচ্ছে। নারী আসনে সরাসরি ভোটের কথা বলছে। তাদের মাথায় কী আছে? আমি জানি না আল্লাহ জানেন। তারা পুরো পরিস্থিতি নিয়ে হ-য-ব-র-ল করার তালে আছে। তারা নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র করছে। কারণ অনেক রাজনৈতিক দলের ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার মতো লোক নেই।
ড. আসাদুজ্জামান রিপন আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশকে নানা ভাবে দুর্বল করার জন্য সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে সীমান্ত দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে না পারে সেজন্য বাধা সৃষ্টি করছে। কারণ বাংলাদেশের সব দিয়ে দেওয়ার মতো বন্ধু রাষ্ট্র নেই। শেখ হাসিনা এক সময় বলতেন, ‘ভারতকে এত কিছু দিয়েছি ভারত সারা জীবন মনে রাখবে।’ সারা জীবন মনে রাখার কারণে শেখ হাসিনাকে ভারত এখন আশ্রয় দিয়েছে। ভারত এখন আমাদের কাছে যা চায়, তা পায় না বলে এই বাংলাদেশের মানুষকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অশান্ত করে তুলতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। ভারত সরকারকে বলতে চাই, আপনারা কি এখন আওয়ামীবান্ধব প্রতিবেশী থাকবেন, নাকি জনগণ বান্ধব প্রতিবেশী হবেন। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত এখন বন্ধুহীন দেশ হয়ে পড়েছে। তাদের এখন আর প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত একেবারে শত্রুতা সৃষ্টি করছে।
ড. আসাদুজ্জামান রিপন আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাব, আমদের পররাষ্ট্র নীতি নতজানু হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভারত যদি আমাদের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, তা হলে আমাদেরও উচিত হবে ভারত থেকে যেসব পণ্য আমরা আমাদানি করি সেটা বন্ধ করে দেওয়া। আমাদের দেশের মানুষ সংগ্রাম করে বেঁচে থাকবে। ভারত যদি আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, আমরা বাংলাদেশের মানুষ সাবলম্বী হয়ে বাঁচব। ভারতের অন্যায় আবদারের কাছে আমরা মাথানত করব না। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের মানুষ পছন্দ করে না। কারণ ভারত বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সরকারকে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া আহ্বান জানাচ্ছি।
টুঙ্গিপাড়া পৌর বাস টার্মিনাল মাঠে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ সালাহউদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম।
প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানী। বিশেষ বক্তার বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কাজী আবুল খায়ের।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিক উজ্জামান।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান বাবলু, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান নাসির, পৌর বিএনপির (ভারপ্রাপ্ত) আহ্বায়য়ক সুশান্ত সরকার, সদস্য সচিব এমদাদ মোল্লা।
১৭ বছর পর এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে টুঙ্গিপাড়ায় বিভিন্ন সড়কে নির্মাণ করা হয় তোরণ। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উৎসবের আমেজে হাজার-হাজার নেতাকর্মী এ সম্মেলনে অংশ নেয়। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা পরিবেশন করা হয়।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে শেখ সালাহউদ্দিন আহম্মেদকে সভাপতি ও মনিরুজ্জামান বাবলুকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া এমদাদ হোসেন মোল্লাকে সভাপতি ও জিহাদুল ইসলাম বাবুকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট টুঙ্গিপাড়া পৌর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়।