আন্দোলনের মুখে মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ এএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং অবরোধের মুখে মুচলেকা দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়েছেন আনন্দমোহন কলেজের (এএম কলেজ) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ সাকির হোসেন। আজ সোমবার (১৮ আগস্ট) বেলা ১টার দিকে মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন তিনি।
আনন্দমোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ সাকির হোসেন সকাল ১০টার দিকে কলেজের নতুন ভবনের হিসাব শাখায় আসেন। খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে সেখানে অবরুদ্ধ করে ফেলে। এর দুই ঘণ্টা পর বেলা সোয়া ১টার দিকে তিনি আর কলেজে আসবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। গত ৩ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি যোগদান করেন এবং সেদিন দুপুর ১টা থেকেই অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেন।
অভিযোগ রয়েছে উপাধ্যক্ষ সাকির হোসেন তার সমর্থক শিক্ষকদের নিয়ে সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহকে অপমান-অপদস্ত করেন। এর প্রতিবাদের গত ১২ আগস্ট থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজও সে তালা খোলা হয়নি।
সাকির হোসেন আজ কলেজে আসার খবর পেয়ে হিসাব শাখার কক্ষেও তালা দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে মুচলেকা দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিতে থাকে।
এর আগে গত ৩১ জুলাই অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহকে ওএসডি করে মাউশিতে বদলি এবং উপাধ্যক্ষ সাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ৩ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন সাকির হোসেন। এর আগে গতকাল দুপুরে ৭০ শিক্ষার্থীর গণস্বাক্ষরে বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর মোহাম্মদ সাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণের দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাকিব হাসান আজ দুপুরে এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
স্মারকলিপিতে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে আর্জি জানিয়ে বলা হয়েছে, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আনন্দমোহন কলেজ, ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে আসীন সাকির হোসেনের আপন ছোট ভাই বাকের হোসেন নয়ন যুবলীগনেতা এবং ২০২৪ সালের অভুত্থানের সময় শহীদ সাগর হত্যায় যুক্ত থাকায় বিস্ফোরক মামলায় জেলখাটা আসামি। তার সহোদর বড় ভাই জাকির হোসেন আনন্দমোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ থাকাকালীন এই কলেজে ছাত্রলীগকে লালন-পালন করে দুর্নীতির নানাবিধ সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তার সময়েই ছাত্রলীগ কলেজে সবচেয়ে শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠা পায়। এর ফলে এই কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা শহীদ সাগরের রক্তের ওপর দিয়ে এমন চিহ্নিত স্বৈরাচারের দোসর পরিবারের সদস্য ও ফ্যাসিবাদি আওয়ামী দোসর মোহাম্মদ সাকির হোসেনকে কোনোভাবেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে মানতে পারছে না। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা দ্রুত তার (অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ) উভয় পদ থেকে দ্রুত অপসারণের দাবিতে কক্ষে তালা দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কলেজের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত ১২ আগস্ট থেকে আজ (গতকাল) ১৭ আগস্ট পর্যন্ত অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে রেখেছে। এতে কলেজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে কলেজের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে এবং কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, এমতাবস্থায় কলেজের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু এবং সুশৃঙ্খল রাখার স্বার্থে অনতিবিলম্বে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অপসারণ করে নতুন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদায়নের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।