যদি মনে করি জিতে গেছি, তাহলে বড় ভুল হবে : মির্জা ফখরুল

দেশের গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে, সরকারের ভেতর থেকে একটি মহল সচেতনভাবে সেই চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক বেশি সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেক বেশি কাজ করতে হবে। আমরা যদি মনে করি, আমরা জিতে গেছি, সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে, তাহলে বড় ভুল হবে। সরকারের ভেতরের একটি মহল অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করছে যে যারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তারা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে। আজকে যখন দেখি, পত্রিকায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কর্মকর্তাকে, উপদেষ্টাকে আওয়ামী লীগের লোকজন হেনস্তা করছে, তখন কোথায় যাব আমরা? এটা আমাদের মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি করেছে।
আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ কাজী জাফর আহমেদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় দেখলাম বিরাট করে খবর ছাপা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন ব্যক্তি যিনি দেশে ব্যাংক লুটের জন্য বিখ্যাত, তিনি দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনাকে আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন এবং পরিকল্পনা করেছেন, তারা কীভাবে ওই টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশের নির্বাচন বন্ধ করবে, হাসিনাকে আবার ফিরিয়ে আনবে।
তিনি বলেন, একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রের যে ট্রানজিশন (রূপান্তর) সেখানে যেতে হবে, আমরা তার জন্য কাজ করছি। এরইমধ্যে অনেক কাজ হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে বিষয়গুলো এসেছে, তার অনেকগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, অনেকগুলোতে তারা একমত হতে পারেনি। নির্বাচনের একটি তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা ৩১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছি যার মধ্যে সংস্কারের সবগুলোই আছে। আমরা প্রথম থেকেই সংস্কারের পক্ষে। আমরা তখন উপলব্ধি করেছিলাম, বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সংস্কারের জন্য যত সহযোগিতা লাগে, আমরা তা অন্তর্বর্তী সরকারকে করেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কোথাও বাধা সৃষ্টি করিনি, কোনো বড় রকমের দাবি তুলে রাজপথে নেমে সরকারের বিরোধিতা করিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু রাজনৈতিক মহল পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে বানচাল ও ব্যাহত করার জন্য নিত্যনতুন দাবি তুলে ধরছে। এমন সব দাবি তারা তুলে ধরছেন, যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ আসলে পরিচিতই না। যেখানে সংস্কার শব্দটির সঙ্গেই সাধারণ মানুষ পরিচিত নয়।
জ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিক বলেন, সংখ্যানুপাতিক ভোট বোঝাতে সময় লাগবে, এটা বোঝানো খুবই কঠিন। এরপর কাকে ভোট দিলেন, আপনি তা জানেন না। ভাবলেন, এলাকায় একজন জনপ্রিয় মানুষ আছেন, তাকে লক্ষ্য করে ভোটটা দিলেন, কিন্তু দেখা গেল হয়ে গেলেন অন্যজন। এ বিষয়গুলো এখন আমাদের কাছেও পরিষ্কার নয়, সাধারণ মানুষের কাছেও নয়। অথচ এগুলো নিয়ে তারা জোরেশোরে হুমকি দিচ্ছে।
কেন তারা এমন করছে— প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, আমরা তো ঘরপোড়া গরু। আমরা দেখেছি, যখনই কোনো পরিবর্তন হয়, তখনই সেই সুযোগ অন্যরা নিয়ে নেয়। নির্বাচন আয়োজনে যত দেরি হয়, তত তারা সুবিধা পেয়ে যায়। এক-এগারোর সরকার দুই বছর থাকল এবং ফ্যাসিস্টের হাতে ক্ষমতা তুলে দিল। গত ১৫ বছর ধরে সেই ভোগান্তি আমাদের পোহাতে হয়েছে। তারা বাংলাদেশের অর্থনীতি শেষ করে দিয়েছে। রাজনৈতিক কাঠামো শেষ করেছে। মানুষের মন-মানসিকতা সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি রাজনীতিতে কোনোদিন হতাশ হইনি। সবাইকে সাহস দিয়েছি, অনুপ্রেরণা দিয়েছি। কিন্তু ইদানীং একটা হতাশার ছায়া ঘোরাঘুরি করছে। কেন? যেদিকে তাকাই, দেখি বেশিরভাগ মানুষ নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্নীতি… আপনি কোনো অফিস-আদালতে যেতে পারবেন না। একজন ব্যবসায়ী বলেছেন, আগে এক লাখ টাকা দিতে হতো, এখন দিতে হয় পাঁচ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, মনমানসিকতার মধ্যে যে পরিবর্তন নিয়ে আসার কথা ছিল, সেই পরিবর্তনটা আনতে পারেননি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিক নেতারাও তাতে জড়িত হয়ে পড়েছেন। যেটা বাংলাদেশের আরও বেশি ক্ষতি করছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা দরকার। এ দেশটা আমাদের। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি। আমাদের অনেককে গুলি খেতে হয়েছে। অনেকের ভাই-বোন-মা শহীদ হয়েছেন। বাড়িঘর পুড়ে গেছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেই একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার অনেক চেষ্টা চলছে। কিন্তু সেটা ভোলা সম্ভব নয়। যারা সেদিন সহযোগিতা করেছেন, তারাই আজ অনেক বড় বড় কথা বলছেন।