‘নির্বাচন বানচালের জন্য পরিকল্পিতভাবে নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে’

সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে কিছু রাজনৈতিক মহল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য, নির্বাচনকে ব্যহত করার জন্য নিত্যনতুন দাবি তুলে চলেছে। এমন এমন দাবি তুলছেন যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষেরা পরিচিতই না। সংখ্যানুপাতিক পিআর, সংখ্যানুপাতিক ভোট এটা বুঝতে সময় লাগে, এটা বোঝানো কঠিন খুবই কঠিন। এগুলো নিয়ে তারা হুমকি দিচ্ছে, কথা বলছেন, অত্যন্ত জোরেশোরে হুমকি দিচ্ছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন করছেন এটা?
আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে এক আলোচনায় তিনি এই সর্তকবার্তা জানান। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের যৌথ উদ্যোগে রাজনীতিবিদ কাজী জাফর আহমদের ১০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে একটা পত্রিকায় সকালবেলা উঠে দেখলাম যে, বিরাট করে ব্লক করে খবর বেরিয়েছে, এক ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যাংক লুটে যুক্ত, তিনি আ্ড়াই হাজার কোটি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন হাসিনাকে। উনি এস আলম … দিল্লিতে বসে তিনি ইতিমধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছেন এবং পরিকল্পনা করেছেন যে, কিভাবে ওই টাকাকে ব্যবহার করে তারা বাংলাদেশে নির্বাচন বন্ধ করবে এবং হাসিনাকে আবার দেশে ফিরিয়ে আনবে।
তিনি বলেন, এজন্যই আমি আপনাদেরকে সবসময় অনুরোধ করছি, অনেক বেশি সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। আমাদেরকে এখন অনেক বেশি লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা যদি মনে করে থাকি যে, আমরা জিতে গেছি, সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে, তাহলে বিরাট ভুল হবে।
‘কেউ বসে নেই’
মির্জা ফখরুল বলেন, বসে নেই কেউ। যারা আপনার ফায়দা নিতে চায় এরা বিভিন্নভাবে কাজ করেছে। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হবে যারা আমরা দেশকে ভালোবাসি, কাজী জাফরের অনুসারী হিসেবে, যারা আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যারা আমরা লড়াই করতে দ্বিধাবোধ করি না, যারা রক্ত দিতে দ্বিধাবোধ করি না, তাদেরকে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ন্যূনতম বিষয়গুলোতে একমত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
‘চারিদিকে হতাশার ছায়া’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ইদানিং মাঝে মাঝে আমার কাছে একটা হতাশার ছায়া ঘোরাঘুরি করে। যেদিকে তাকাই দেখি বেশিরভাগ মানুষই আপনার নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্নীতি, দুর্নীতি, দুর্নীতি… আপনি কোনো অফিস আদালতে যেতে পারবেন না। আমি এর আগেও কথা বলেছি, আমাকে একজন শিল্পপতি বলেছেন যে আগে এক লাখ টাকা দিতে হতো, এখন দিতে হয় পাঁচ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, অর্থাৎ যে পরিবর্তন নিয়ে আসার কথা ছিল মন-মানসিকতার মধ্যে, সেই পরিবর্তনটা কিন্তু আনতে পারিনি এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিক নেতা-টেতারাও এর মধ্যে জড়িত হয়ে পড়ছেন। যেটা আরও বেশি ক্ষতি করছে বাংলাদেশের জন্য। আজকে বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য আমাদের সকলের এগিয়ে আসা দরকার। এ দেশটা তো আমাদের।
‘একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ১৯৭১ সালে আমরা যারা যুদ্ধ করেছিলাম এখানে সবাই আছি। আমাদের অনেকে গুলি খেয়েছে, অনেকের ভাই মারা গেছে, মা মারা গেছে, বাড়িঘর পুড়ে গেছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেই একাত্তরের কথা আমরা ভুলি নাই, বা ভোলানো সম্ভব নয়। অনেক প্রচেষ্টা চলছে এটাকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা চোখের সামনে দেখেছি আমাদের মা-বোনদেরকে বেইজ্জতি করতে, চোখের সামনে দেখেছি আমরা আমাদের ভাইদের গলা কেটে ফেলে দিতে, চোখের সামনে দেখেছি বাস থেকে নামিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে গুলি করে মেরে ফেলতে। যারা সেদিন সহযোগিতা করেছে, তারাই আজকে অনেক বড় বড় কথা বলছে।
‘সরকারেও একটি মহল ঘাপটি মেরে আছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের ভেতরে একটা মহল তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করছে যে, যারা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তারা যেন আসতে না পারে। আজকে যখন পত্রিকায় দেখি, নিউইয়র্কে আমাদের বাংলাদেশের কর্মকর্তাকে, আমাদের একজন উপদেষ্টা অথবা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদেরকে আওয়ামী লীগের লোকেরা হেনস্তা করছে, হামলা করছে, তখন কোথায় যাব আমরা?
‘দেশের অর্থনীতির দুরাবস্থা’
মির্জা ফখরুল বলেন, জিনিসপত্রের দাম আবারও বেড়ে চলেছে। অর্থনীতির অবস্থা … আমার স্ত্রী আজ সকালে ব্যাংকে ফোন করেছেন কিছু টাকা তোলার জন্যে। ব্যাংক বলেছে যে, সরি ম্যাডাম, আমরা ৫ হাজার টাকার বেশি দিতে পারব না। তাহলে কোথায় আমরা? এই এক বছরের মধ্যে যদি আমরা পরিবর্তন আনতে না পারি তাহলে কিভাবে কি হবে? এসব ঝামেলাগুলো এগিয়ে যেতে পারতো যদি তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনটা করতে পারত তারা। একটা ইলেক্টেড গভর্নমেন্ট তার সমস্ত ম্যান্ডেট নিয়ে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এসব শক্তি উড়িয়ে দিতে পারতো।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি এখনও বলি যে, সময় আছে, কাউন্ট ইউর সেন্সেস। অতি দ্রুত এই সনদ, এই সংস্কার … এগুলো জটিলতা বৃদ্ধি না করে শেষ করে ফেলেন এবং অতি দ্রুত নির্বাচনের যে ব্যবস্থা ঘোষণা দিয়েছেন সেটার চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করে ফেলুন এবং একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্বকে নিশ্চিত করুন। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি শেখ শফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নজমুল হক নান্নু প্রমুখ বক্তব্য দেন।