গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিলম্বে দেশে সংকট প্রকট হচ্ছে : আমীর খসরু

‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিলম্বের কারণে দেশে সংকট প্রকট হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে ‘স্কুল অব লিডারশিপ’ নামক সংগঠনের উদ্যোগে ‘পোস্ট জুলাই পলিটিক্যাল থটস : হুইচ ডিরেকশন বাংলাদেশ ইজ ওয়াকিং’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, ‘যেসব দেশ বিপ্লবোত্তর অথবা এরকম ঘটনার পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে পেরেছে ওই দেশগুলো বেঁচে গেছে, ওই দেশগুলো ভালো করছে। আর যে দেশগুলো এই বিপ্লবোত্তর সময়ে আমার দাবি-ওর দাবি করতে করতে ঝামেলা বাগাইছে ওইসব দেশে গণতন্ত্রও নেই, অর্থনীতিও নেই, সমাজও নেই, ওখানে গৃহযুদ্ধ চলছে, ওখানে সমাজের বিভক্তি চলছে, দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।’
‘এজন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এক বছর বেশি সময় হয়ে গেছে। আমাদের অনেক আগে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশকে একটি ডেমোক্রেটিক অর্ডারে নেওয়ার কথা ছিল এবং এই না যাওয়ার কারণে দেশ দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছে, সংকট প্রকট থেকে প্রকট হচ্ছে’, যোগ করেন বিএনপির এই নেতা।
আমীর খসরু বলেন, ‘সরকার ও জনগণের মাঝখানে কোনো ব্রিজ নেই। সেই কারণে কী হচ্ছে দেশে? পুলিশ কাজ করছে না, সরকারি কর্মকর্তারা কাজ করতে পারতেছে না। আইনশৃঙ্খলা নেই, ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। একজন বলে গেলেন—দেশে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। মিল-ফ্যাক্টরিতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। আমার শ্রমের একটা বিনিয়োগ আছে, আমার সময়ের একটা বিনিয়োগ আছে, সে যে কাজটা করবে করার জন্য তার তো শর্ট টার্ম, মিড টার্ম ও লং টার্ম একটা প্রজেকশন আছে। এখন তো সেটা নেই। ইন্টেরিম মানে তো ইন্টেরিম বুঝতে হবে। এই অবস্থায় এখানে সিদ্ধান্ত কেন নেবে?’
অন্তর্বর্তী সরকারের বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই যে একটা সামিট হলো ওদিন। আমি উপস্থিত ছিলাম ওই সামিটে এবং ওই সামিটে একটা বিনিয়োগও আসে নাই। আসবে না তো। অনেকে যারা উপস্থিত হয়েছে বেশিরভাগ, বর্তমানে যারা বিনিয়োগকারী তারাই গেছে ওখানে। আমি তো সবাইকে চিনি, নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। কিন্তু যেই মুহূর্তে নির্বাচনের ঘোষণা এসছে, এখন নড়াচড়া আরম্ভ হয়েছে। ওই ১০৭ জন জাপানি ডেলিগেশন নির্বাচন ঘোষণা দেওয়ার পরে তারা এখন আসছে দেখতে। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত নেবে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে এই ১৫-১৬ বছরে যে গোষ্ঠী ভিত্তিক একটা অর্থনীতি গড়ে উঠেছে, অর্থনীতিতে যে পৃষ্ঠপোষকতা হয়েছে, যার কারণে মার্কেট ভেঙে গেছে, মুক্তবাজার অর্থনীতির কনসেপ্ট ধ্বংস হয়ে গেছে।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এজন্য বিএনপির একটা বড় স্লোগান কী জানেন—‘ডেমোক্রেটাইজেশন অব ইকোনমি’। আপনি খালি রাজনীতিতে ডেমোক্রেটাইজেশন করবেন আর অর্থনীতি আপনার পকেটে থাকবে, আপনার লোকেরা পকেটে থাকবে। ডেমোক্রেসি উইল নট ওয়ার্ক, অর্থাৎ ডেমোক্রেসি তখনই কাজ করবে যখন আপনার রাজনীতিতে গণতন্ত্রায়ন হবে, অর্থনীতিতে গণতন্ত্রায়ন হবে, সমাজে গণতন্ত্রায়ন হবে, আপনার পরিবারেও গণতন্ত্রায়ন হতে হবে। তখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র কাজ করবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই গণতন্ত্রায়নের অর্থ হলো—সবার জন্য সমান অধিকার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রত্যেকটি নাগরিককে অংশগ্রহণের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে সমাজে অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা থাকলে সেটাই হবে গণতন্ত্র।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা খালি ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলাম, এটা একমাত্র গণতন্ত্র না। আমরা যারা রাজনীতি করি, যারা আমরা দেশের পলিসির কথা বলি, আমাদেরকে এগুলো অনুধারণ করতে হবে, ধারণ করতে হবে এবং নিশ্চিতভাবে ডেলিভার করতে হবে। এখন খালি আপনি রেটরিকের মাধ্যমে রাজনীতির দিন শেষ হয়ে গেছে।’
বিএনপির অর্থনৈতিক কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন হচ্ছে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন। ১৮ কোটি মানুষকে আমরা যেন মানবসম্পদে পরিণত করতে পারি, ইনভেস্ট করতে পারি, এজন্য জিডিপির ৫ শতাংশ ইনভেস্ট করব আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে, লেখাপড়া ঠিক থাকতে হবে। এটা প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য নিশ্চিত করতে হবে, এটা তার নাগরিক অধিকার। এটা তো আপনি কাউকে ফেভার করতেছেন না। আপনি তো ফেভার করতে করতে অর্থনীতির ১২টা বেজে গেছে। এর এটা দরকার, ওর ওইটা দরকার কিন্তু যারা নাগরিক তার অধিকারটা কোথায়? সুতরাং পলিটিক্স হ্যাজ চেঞ্জ, আকাঙ্ক্ষা বদলে গেছে। রাজনীতির জবাবদিহিতা অন্য লেভেলে যাবে এবং যাওয়া উচিত। ওইভাবে আগামীর বাংলাদেশে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আশা করছি।’
আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপনসহ বিভিন্ন পেশার নেতারা বক্তব্য দেন।