মোদি-শাহরুখসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধায় লতার শেষকৃত্য
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/02/06/lata_last_cover.jpg)
যতক্ষণ শ্বাস থাকবে, গাইবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। বলেছিলেন, নশ্বর দেহের অনন্তযাত্রার সঙ্গে তাঁর গানও সামিল হবে। ভক্তদের বিশ্বাস, তাঁর গান হাজার বছর ধরে সুরপিয়াসীদের পিপাসা মেটাবে। তবে বস্তু-পৃথিবীর সত্য এই, তিনি আর নেই।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর, আজ রোববার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের শেষকৃত্যানুষ্ঠান শুরু হয়। শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিশিষ্টজনেরা।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে, বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান, রণবীর কাপুর, শ্রদ্ধা কাপুরসহ অনেক তারকা হাজির হয়েছিলেন শিবাজি পার্কে। শিবাজি পার্কে বাজানো হয় লতা মঙ্গেশকরের গান।
নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। হাসপাতাল থেকে বাসভবন, পরে শিবাজি পার্কে লতা মঙ্গেশকরের মরদেহ নেওয়ার সময় ২০ জন ডিসিপিসহ প্রায় দুই হাজার ৭০০ জন পুলিশ উপস্থিত ছিলেন।
শিবাজি পার্কে একটি বিশেষ মঞ্চ তৈরি করা হয়। সেখানে রাখা হয় লতা মঙ্গেশকরের মরদেহ। জনসাধারণ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এর আগে লতা মঙ্গেশকরের বাসভবন প্রভুকুঞ্জে পরিবারের লোকজনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ এই সুরসম্রাজ্ঞীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/02/06/lata_last_inner.jpg)
ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় লতা মঙ্গেশকরের সম্মানে ব্যবসায়ীরা সব দোকান বন্ধ রাখেন। তাঁরা শিবাজি পার্কে শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করেন।
কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে ভারতে দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এ সুরসম্রাজ্ঞীর সম্মানে আজ রোববার ও আগামীকাল দুদিন ভারতের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরের সম্মানে আগামীকাল ৭ ফেব্রুয়ারি ছুটি ঘোষণা করেছে।
লতার মৃত্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ শোক শোক প্রকাশ করেছেন। গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লতা মঙ্গেশকর আজ ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ১২ মিনিটে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ৯২ বছর বয়সে স্বজনসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।
বাংলা গানে তুমুল জনপ্রিয় লতা মঙ্গেশকর। ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’, ‘ও মোর ময়না গো’, ‘ও পলাশ ও শিমুল’, ‘আকাশপ্রদীপ জ্বেলে’সহ আরও অনেক বিখ্যাত বাংলা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক অবস্থার আবার অবনতি হয়। পরে তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে নেওয়া হয়।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/02/06/lata_last.jpg)
জানুয়ারির শুরুর দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে লতা মঙ্গেশকরকে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি নিউমোনিয়ায়ও ভুগছিলেন। পরে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতিও হয়।
২৮ জানুয়ারি লতা মঙ্গেশকরকে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট থেকে সরিয়ে কেবিনে নেওয়া হয়। সে সময় শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। তবে ৫ ফেব্রুয়ারি ফের তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে নেওয়া হয়।
গত ৮ জানুয়ারি লতা মঙ্গেশকরের কোভিড নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরদিন লতা মঙ্গেশকরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনা ও নিউমোনিয়ার জোড়া ফলায় বিদ্ধ হয়েছিলেন সুরসম্রাজ্ঞী।
১৯২৯ সালে ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। তাঁর বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর ও মা সেবন্তি মঙ্গেশকর। ভাইবোনদের মধ্যে লতা মঙ্গেশকর সবার বড়। তাঁর ভাইবোনেরা হচ্ছেন মীনা খাদিকার, আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর ও হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।
১৯৭৪ সালে সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস বুকে নাম উঠেছিল তাঁর। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে ২৫ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করার অনন্য নজির গড়েছেন লতা মঙ্গেশকর।
তিন বার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত লতা মঙ্গেশকর এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় সিনেমাতে প্লে-ব্যাক করেছেন। ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষা ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তারই।
১৯৪২ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে সংগীতে ক্যারিয়ার শুরু করেন লতা মঙ্গেশকর। ৭০ বছরের ক্যারিয়ারে ৩০ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কিংবদন্তি এ শিল্পী।
লতা মঙ্গেশকর পদ্ম ভূষণ, পদ্ম বিভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারসহ ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন পেয়েছেন। ৯২ বছর বয়সী এ শিল্পী টুইটারের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন অনুরাগীদের সঙ্গে। নানা সময়ে অন্য শিল্পীদের বিশেষ দিবসে টুইট করতেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনে এক বিশেষ অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।
লতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমেছে ভারত-বাংলাদেশসহ বিশ্বসংগীতাঙ্গনে। লতার মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ।