ডেভিলস হর্নের ডিও

মেটালহেড কিংবা মেটালপ্রেমীদের কাছে ডেভিলস হর্ন খুবই প্রিয় একটি চিহ্ন। হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে মধ্যমা আর রিং ফিঙ্গার আটকে বাকি দুটি আঙুল উন্মুক্ত রেখে যে একটি বিশেষ ভঙ্গি করতে দেখা যায় মেটালপ্রেমীদের, একেই বলা হয় মেটাল হর্ন বা ডেভিলস হর্ন। মেটালপ্রেমীদের কাছেই শুধু নয়, কালে কালে এখন অনেকেরই সহজাত অঙ্গুলিভঙ্গিমা এটি। জেনে রাখুন, এই চিহ্নের জনকের জন্মদিন আজ। তাঁর নাম রোনি জেমস ডিও।
ডেভিলস হর্নের উৎপত্তি নিয়ে অবশ্য খানিকটা বিভ্রান্তিও আছে। তবে তা সত্ত্বেও এর জন্য ডিওর অবদান এতটাই যে এই চিহ্নের পুরো ক্রেডিট তাঁকে দেওয়াই যায়। হেভি মেটাল শিল্পী রোনি জেমস ডিও ১৯৭৯ সালে ব্রিটিশ ব্যান্ড ব্ল্যাক স্যাবাথের লাইনআপে যুক্ত হওয়ার পর এই ‘সিম্বল’ দেখানো শুরু করেন স্টেজে। ব্যান্ডে তাঁর আগের ভোকালিস্ট ওজি অসবর্ন বিখ্যাত ছিলেন দুই হাতের দুই আঙুল উঁচিয়ে ‘পিস সাইন’ দেখানোর জন্য। কিন্তু ওজির মতো নয়, ডিও চেয়েছিলেন নতুন কিছু করতে, সেজন্যই বেছে নেওয়া ডেভিলস হর্ন চিহ্নটিকে। ডিওর ভক্তরাও জবাবে ডেভিলস হর্ন দেখিয়ে উল্লাস জানাতেন। ধীরে ধীরে কনসার্টের বাইরেও ডিও এবং তাঁর ভক্তরা এই চিহ্ন ব্যবহার করতে থাকেন।
পরবর্তীতে অবশ্য চিহ্ন ডিওর একার সম্পত্তি হয়ে থাকেনি। বিশ্বের অনেক মেটাল এবং রক ব্যান্ডের সদস্যরা কনসার্টে এই ডেভিলস হর্নের শোঅফ করেন। একসময় মেটাল জগৎ ছাড়িয়ে অন্য ঘরানার তারকাদেরও দেখা যায় এই চিহ্ন প্রদর্শন করতে। রিহানা কিংবা ব্রিটনির মতো পপ তারকাদের দেখা গিয়েছে স্টেজে এই ভঙ্গি করতে। এমনকি সবশেষ দুই মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামাও তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণায় জনগণের উদ্দেশে ডেভিলস হর্ন প্রদর্শন করেছেন। ডিওর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার পর ধরেই নেওয়া হয়, এই ভঙ্গি একজন তারকাকে তাঁর ভক্তদের আরো কাছে নিয়ে যেতে পারে।
তবে ডিওর আগে ১৯৬৯ সালে আমেরিকান ব্যান্ড কভেনের ‘উইচক্র্যাফট ডেসট্রয়স মাইন্ডস অ্যান্ড রিপস সোলস’ অ্যালবামের ব্যাক কাভারের ছবিতে ব্যান্ডের সদস্যদের ডেভিলস হর্ন প্রদর্শন করতে দেখা গিয়েছিল। এমনকি সে বছরই ব্রিটিশ ব্যান্ড ‘দ্য বিটলস’-এর স্টুডিও অ্যালবাম ‘ইয়েলো সাবমেরিন’-এর কাভারে জন লেননের কার্টুনটিকে দেখা যায় এই ‘ডেভিল সাইন’ প্রদর্শন করতে। কিন্তু এটি অস্বীকারের কোনো উপায় নেই যে মেটাল কিংবা ব্যান্ডজগতে এই বিশেষ চিহ্নটি জনপ্রিয় করানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে ডিওর। এ কারণেই তাঁকে বলা হয় মেটাল হর্নের জনক।
মজার বিষয় কি জানেন? চিহ্নটির খোঁজ ডিও পেয়েছিলেন তাঁর দাদির কাছ থেকে। তাঁর দাদি মোটেও কোনো মেটালহেড ছিলেন না! এই ইতালিয়ান নারী ছিলেন প্রচণ্ড কুসংস্কারে বিশ্বাসী। তিনি ছোটবেলায় ডিওর সামনে এই চিহ্নটি ব্যবহার করতেন অশুভ শক্তি থেকে তাঁকে রক্ষা করতে! ধারণাটা এমন, যেকোনো বিপদ কিংবা অভিশাপ থেকে এই চিহ্ন তাঁদের রক্ষা করতে পারে। আবার এই চিহ্ন ব্যবহার করে সেই অশুভ শক্তিকে ডেকেও আনা যায়। তাই ভিন্ন কিছু করার আশায় ডিও স্টেজে এই চিহ্ন ব্যবহার করা শুরু করেন। বহু বছর পর দাদি থেকে পাওয়া সেই ‘শিক্ষা’ ব্যবহার করে ডিও হয়ে ওঠেন দারুণ জনপ্রিয়।
১৯৪২ সালে আজকের দিনে জন্ম নেওয়া এই হেভি মেটাল তারকা গেয়েছেন অসংখ্য গান। ইএলএফ, রেইনবো, ব্ল্যাক স্যাবাথ, ডিও এবং হেভেন অ্যান্ড হেলের মতো ব্যান্ডগুলোর সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর গাওয়া ‘হোলি ডাইভার’ গানটি শুনে কোনোদিন হেডব্যাং করেনি, এরকম মেটালভক্ত মনে হয় পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া ‘রেইনবো ইন দ্য ডার্ক’, ‘ম্যান অন দ্য সিলভার মাউনটেইন’, ‘নিয়ন নাইটস’ কিংবা ‘দ্য লাস্ট লাইন’-এর মতো অসাধারণ গানগুলোও ডিওর গাওয়া। মেটাল দুনিয়ার অন্যতম সফল এবং জনপ্রিয় এই তারকা মারা যান ২০১০ সালের ১৬ মে। মেটালপ্রেমীরা এখনো ‘মেটাল হর্ন’-এর এই জনককে গভীরভাবে স্মরণ করে।