এক প্যারার সিভিতেই এফটিআই প্রেসিডেন্ট গজেন্দ্র!

ভারতের পুনেতে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের বিতর্কিত প্রধান গজেন্দ্র চৌহানকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে নতুন তথ্য। এনডিটিভির খবরে জানা গেল, মাত্র এক প্যারার জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েই এফটিআইআইর সম্মানজনক পদটি বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। একটি তথ্য অধিকার আইনের আওতায় অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ খবর জানিয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, আরো একটি তথ্য জানলে অনেকেই অবাক হতে পারেন। গজেন্দ্রর সেই সিভির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজের সংখ্যা ছিল মাত্র একটি! তা হলো, টেলিভিশন সিরিয়াল ‘মহাভারত’-এ যুধিষ্ঠির চরিত্রে অভিনয়! ‘গজেন্দ্র চৌহান মূলত পরিচিত মহাভারতে (টিভি সিরিজ) যুধিষ্ঠির চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। তিনি প্রায় ১৫০টি সিনেমা এবং ৬০০টি টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন,’ অনুসন্ধানের জবাবে এভাবেই উত্তর দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। গজেন্দ্র চৌহানের পেশাগত ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়েও জানতে চাওয়া হয় ওই অনুসন্ধানে।
ভারতের এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স) সরকার তাঁকে এফটিআইআই সোসাইটির প্রেসিডেন্ট এবং এর গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় এ বছরই। মন্ত্রণালয়ের ২৮১ পাতার প্রতিবেদন থেকে জানা যায় আরো চমকপ্রদ তথ্য। এফটিআইআইর এই পদের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বাঘা সব পরিচালক-তারকার নাম। এ তালিকায় রয়েছে অমিতাভ বচ্চন, রজনীকান্ত, বিধু বিনোদ চোপড়া, জাহ্নু বড়ুয়া, রাজু হিরানি, জয়া বচ্চন, আদুর গোপালকৃষ্ণন, রমেশ সিপ্পি, গোবিন্দ নিহালনি ও আমির খানের নাম। তবে এঁদের সবাইকে ডিঙিয়ে আধা পৃষ্ঠার সিভি জমা দিয়েই প্রেসিডেন্টের চেয়ার বাগিয়ে ফেলেন গজেন্দ্র। মজার বিষয়, প্রস্তাবিতদের মধ্যে একমাত্র গজেন্দ্র চৌহানের সিভিই ছিল এক প্যারার!
২০১৪ সালেই প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগের জন্য এফটিআইআইর পক্ষ থেকে এই নামগুলো জমা দেওয়া হয়েছিল।
এক পাতার সিভি এবং যুধিষ্ঠির চরিত্রে মহাভারতে অভিনয় ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন কারণে বা কোন বিশেষ যোগ্যতার ভিত্তিতে গজেন্দ্র চৌহানকে এফটিআইআই প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো, এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা নেই প্রতিবেদনে। প্রস্তাবিত যোগ্যতর অন্যদের ডিঙিয়ে কেন গজেন্দ্র চৌহান? এ প্রশ্নের সদুত্তর সতর্কভাবে এড়িয়ে গেছে মন্ত্রণালয়।
গজেন্দ্র চৌহানের নিয়োগে প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অনুপম খের, ঋষি কাপুর, রণবীর কাপুর, সালমান খানসহ আরো অনেক বড় তারকা এই শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা সরাসরি গজেন্দ্র চৌহানের নিয়োগের বিষয়ে তীব্র সমালোচনাও করেছেন।
ধর্মঘট পালন করতে থাকা শিক্ষার্থীরা কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী ও স্বরাজ অভিযানের নেতা যোগেন্দ্র যাদবের সমর্থনও পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, এঁরা দুজনেই সরাসরি ক্যাম্পাসেও এসেছিলেন। ৪০ দিন ধরে ক্যাম্পাস পুরো অচল থাকলেও সরকার অবশ্য নিজের অবস্থান থেকে এতটুকুও নড়েনি। এখন পর্যন্ত গজেন্দ্রকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণের কোনো লক্ষণও নেই সরকারের পক্ষ থেকে।
এফটিআইআই স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (এফএসএ) সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, গজেন্দ্র চৌহানের অপসারণের আগ পর্যন্ত তাদের এ ধর্মঘট জারি থাকবে। ‘অযোগ্য’ ও ‘অদূরদর্শী’ একজন ব্যক্তিকে কোনো অবস্থাতেই এ পদে মেনে নিতে রাজি নন তাঁরা।