চার বছর পর হুমায়ূন আহমেদের গানে শাওন ও টুটুল

‘হুমায়ূন আহমেদ ছিল, এই কথা বলতে এখনো আমি অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। আমার কাছে মনে হয় তিনি আছেন,’ কথাগুলো বলছিলেন কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী, জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী মেহের আফরোজ শাওন। ‘হুমায়ূন আহমেদের গানে যুগলবন্দি’ শিরোনামের এক অনুষ্ঠানে গতকাল অতিথি হয়ে এসেছিলেন মেহের আফরোজ শাওন ও এস আই টুটুল। অনুষ্ঠানটি এনটিভিতে প্রচার করা হবে আগামী ঈদুল আজহায়। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করছেন আলফ্রেড খোকন আর উপস্থাপনা করেছেন ফারাহ শারমিন। ২৩ মিনিটের এই অনুষ্ঠানে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা জনপ্রিয় পাঁচটি গান যুগল ও এককভাবে গাইতে দেখা যাবে মেহের আফরোজ শাওন ও এস আই টুটুলকে। পাঁচটি গানের মধ্যে বৃষ্টিবন্দি, চলো না যাই, তোমার চোখের সামনে—এই গান তিনটি দুজনই গান তাঁরা। ‘যদি মন কাঁদে’ ও ‘আমি আজ ভেজাব চোখ’ গান দুটি এককভাবে গেয়েছেন মেহের আফরোজ শাওন ও এস আই টুটুল। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রায় চার বছর পর একসঙ্গে গান গাইলেন শাওন ও টুটুল।
কেন এত লম্বা বিরতি—প্রশ্ন করতেই মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘আসলে গান এখন আগের মতো গাওয়া হয় না। হয়তো এর মধ্যে দুই-একটা গান গেয়েছি। একবারে টানা কয়েকটি গান অনেক দিন পর গাইলাম। আমি আসলে গান গাওয়া ভুলেই গিয়েছি। আজ গান গেয়ে অনেক ভালো লাগল। সত্যি বলতে কি, গানের মধ্যে আমি আমার সুন্দর মুহূর্তগুলো খুঁজে পাই। হুমায়ূন আহমেদ গান লেখার পর কী বলেছেন, কী ভেবেছেন এই স্মৃতিগুলো মনে পড়তেই মনে হয়, তিনি বেঁচে আছেন এবং থাকবেন। এখন নিয়মিত গান গাওয়ার চেষ্টা করব।’
এস আই টুটুল তাঁর কথায় যোগ করে বলেন, ‘আমাদের ধ্রুবতারা ব্যান্ডটা কিন্তু শাওন বুবুরও। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে শাওন বুবু এখন আমাদের সময় দিতে পারেন না। আমরা একটা সময় অনেক স্টেজ শো করেছি।’
হুমায়ূন আহমেদের লেখা এখনো নয়টার মতো গান রয়েছে। সেই গানগুলোর এখন সুর করছেন এস আই টুটুল। তিনি বলেন, ‘শাওন বুবু সময় দিলে খুব শিগগির আমরা আরেকটা গানের অ্যালবাম বের করতে পারব।’ শাওনও কথা দেন, তিনি আর দেরি করবেন না। নতুন গানের কাজ শুরু করবেন।
অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার ফাঁকে হুমায়ূন আহেমদ কোন গান কখন কীভাবে লিখেছেন, সেটা বলেন মেহের আফরোজ শাওন ও এস আই টটুল। ‘আজ আমি ভেজাব চোখ’ হুমায়ূন আহমেদের লেখা এই গান প্রথম সুর করেন এস আই টুটুল। এই গানের চমৎকার সুর করে হুমায়ূন আহমেদের হৃদয়ে গেঁথে যান টুটুল, এ কথা জানালেন মেহের আফরোজ শাওন। এর পর শাওন ‘চলো না যাই’, ‘যদি মন কাঁদে’, ‘তোমার চোখের সামনে’ গান তিনটি কীভাবে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, সেটা বলেন।
‘চলো না যাই’ গানের জন্ম নিয়ে শাওন বলেন, ‘গানটি যখন হুমায়ূন আহমেদ লেখেন, তখন তিনি আমাকে মজা করে বলেছিলেন, শাওন এখন আমাদের বিয়ে হয়েছে, দেখবে খবরের কাগজে অনেক ছবি আসবে। অনেক পোস্টারও হবে। এটা এখন লিড নিউজ।’
‘যদি মন কাঁদে’ গানটি সম্পর্কে শাওন বলেন, “একজন শিল্পীর জন্য একটা গান গাওয়াই যথেষ্ট। আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে ‘যদি মন কাঁদে’ গানটি আমি গেয়েছি। এই একটি গান ছাড়া আমি যদি আর কোনো দিন কোনো গান না গাইতাম, তবু আমার আফসোস হতো না। এই গানের মাঝে অনেক সুখের ও দুঃখের স্মৃতি রয়েছে। এই গানটি ২০০৬ সালে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন। গানটি লেখার সময় ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ ছবির শুটিং করেছিলেন তিনি। ছবির প্রধান অভিনেত্রী ছিলেন তানিয়া আহমেদ। আমি শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেদিন শুটিংয়ে যেতে পারিনি। আমারও মন খারাপ ছিল। এদিকে টুটুল ভাইয়েরও মন খারাপ ছিল, কারণ তানিয়া আপু বাসায় ছিল না। শুটিংয়ের দিন সেদিন হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। সে সময় হুমায়ূন আহমেদ নুহাশপল্লীর বারান্দায় বসে গানটি লেখেন এবং আমাকে ফোন করে বলেন, ‘কুসুম, তুমি এখনই টুটুলের কাছে গিয়ে গানটা রেকর্ড করে আমাকে পাঠিয়ে দাও।’ তখন নিষাদ হুমায়ূনের সাত মাস চলছিল। হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, তাই আমি আর না করতে পারিনি। সেদিন অসুস্থ শরীর নিয়ে টুটুল ভাইয়ের স্টুডিওতে আমি যাই।”
বোঝাই যাচ্ছিল, শাওন স্মৃতির সাগরে ডুবে যাচ্ছেন। তিনি বলে চলেছেন সেদিনের কথা, ‘টুটুল ভাইয়ের স্টুডিও সাততালার ওপরে আর সেদিনই স্টুডিওর লিফট বন্ধ ছিল। আমি একতলায় উঠি আর টুটুল ভাইয়ের একজন সহকারী আমাকে চেয়ার দেন বসতে। এভাবে বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে আমি স্টুডিওতে পৌঁছাই। এর পর গানটার সুর টুটুল ভাই করার পর মনে হলো, একটা ঐশ্বরিক ব্যাপার। টুটুল ভাই আমাকে খালি গলায় গানটা গাইতে বলেন। আমিও সেভাবে গাই। তার পর গানটিতে হালকা কিছু অলংকার করেন টুটুল ভাই। এভাবে গানের রেকর্ডিং শেষ করি আমরা।’
‘তোমার চোখের সামনে’ গানটি নিয়েও কথা বলেন শাওন। তিনি বলেন, “এই গানটি একটা হিন্দি গানের ভাবানুবাদ করে লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ। ‘তেরে ঘরকে সামনে’ গানটি তিনি প্রায়ই শুনতেন। আমাকে একদিন ডেকে বললেন, ‘কুসুম, এই হিন্দি গানের বাংলাটা কী রকম হবে? আমি তাকে বাংলাটা বললাম। এর পর তিনি গানটি লেখেন। কিন্তু কথাগুলো তাঁর ভাষায় তিনি লিখেছেন। হিন্দি গানটি থেকে শুধু ভাবটা নিয়েছিলেন তিনি।